দলীয় কোন্দলে হামলা–মামলা 

নেতা–কর্মীরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এক পক্ষ সভা-সমাবেশ ডাকলে অপর পক্ষ বাধার সৃষ্টি করছে।

পাবনা জেলার ম্যাপ

পাবনার সুজানগর উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে দলীয় নেতা–কর্মীরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এক পক্ষ সভা-সমাবেশ ডাকলে অপর পক্ষ তাতে বাধার সৃষ্টি করছে। দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেরে সম্প্রতি হামলা-মামলার ঘটনাও ঘটেছে।

বিরোধে জড়ানো তিনটি পক্ষের মধ্যে এক পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম রেজা (হাবিব), আরেকটিতে কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির (তুহিন) এবং অন্য পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিম (সাজ্জাদ)।

উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে বিএনপি নেতা এ বি এম তৌফিক হাসানকে আহ্বায়ক ও আবদুর রউফকে সদস্যসচিব করে ২১ সদস্যের উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে কামাল হোসেন বিশ্বাসকে আহ্বায়ক ও জসিম বিশ্বাসকে সদস্যসচিব করে সুজানগর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তাঁরা চারজন কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফিরের অনুসারী বলে পরিচিত। 

কমিটি থেকে বাদ পড়েন সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম রেজার অনুসারী এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আজম আলী বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক হাজারী জাকির হোসেন এবং বিএনপি নেতা আবদুল হালিমের সমর্থকেরা। এরপরই শুরু হয় দলীয় কোন্দল।

কমিটি থেকে বাদ পড়া নেতাদের দাবি, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির এলাকা থেকে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করতে চান। তিনি দলে প্রভাব বিস্তারের জন্য তাঁর সমর্থকদের নিয়ে কমিটি গঠন করেছেন। কমিটি গঠনের সময় জেলা বিএনপির ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে এবং তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা বাদ পড়েছেন। এতেই দলের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।

দলীয় নিয়মশৃঙ্খলা মেনে ও সবার সঙ্গে আলোচনা করেই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিছু নেতা বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করছেন।
মাসুদ খন্দকার, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব 

কমিটি গঠনের পরই জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সামাদ খান ও যুগ্ম আহ্বায়ক নূর মোহাম্মদ মাসুম নবগঠিত কমিটির বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগপত্রে কমিটি থেকে বাদ পড়া নেতাদের সঙ্গে জেলা বিএনপির এই দুই নেতারও দাবির মিল রয়েছে।

জেলা বিএনপির এই দুই যুগ্ম আহ্বায়কেরও দাবি, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব উপজেলা বিএনপির কমিটি করেছেন। যাঁদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাঁরা ১০ থেকে ১২ বছর দলে সক্রিয় ছিলেন না। সরকারদলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সখ্য রেখে তাঁরা রাজনীতি করেছেন। তাঁদের নিয়ে কমিটি গঠন করায় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। তাঁরা ওই কমিটি বাতিল করে সবার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান।

এদিকে নতুন কমিটি নিয়ে বিরোধ দিনে দিনে চরম আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। কমিটি গঠনের পর থেকেই বিভক্ত নেতা-কর্মীরা একে অপরের ছায়া মাড়াচ্ছেন না। একে অপরের বিরুদ্ধে মিছিল ও সভা সমাবেশ করছেন। এক পক্ষ কোনো কর্মসূচি দিলেই অন্য পক্ষ তাতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। ৫ মে নবগঠিত উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ বি এম তৌফিক হাসান উপজেলার কামালপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে সমাবেশ করতে গেলে তাঁর ওপর হামলা হয়। তাঁকে লোহার রড, লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। এ ঘটনায় তৌফিক হাসানের ভাই বি এম পাভেল মাহমুদ বাদী হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। এজাহারভুক্ত আসামিরা স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। 

এর আগে গত ১৩ এপ্রিল উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে আরও একটি হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় রাশেদ শেখ নামের একজন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এতে নবগঠিত উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব আবদুর রউফকে প্রধান আসামিসহ বিএনপির আরও ১৪ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। 

জানতে চাইলে সেলিম রেজা বলেন, ‘সুজানগর উপজেলা বিএনপির বহু নেতার দলের জন্য ত্যাগের ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির নিজ স্বার্থ রক্ষায় এসব নেতার কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কারও সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই টাকার বিনিময়ে পকেট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে দল চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নেতা-কর্মীরা বিরোধে জড়াচ্ছেন। তাই দলের স্বার্থে আমরা দ্রুত এ আহ্বায়ক কমিটি বাতিল করে সবার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নতুন কমিটি গঠনের দাবি করছি।’ 

এ প্রসঙ্গে জানতে হাসান জাফিরের মুঠোফোনে দুবার ফোন দেওয়া হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান। 

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মাসুদ খন্দকার বলেন, ‘দলীয় নিয়মশৃঙ্খলা মেনে ও সবার সঙ্গে আলোচনা করেই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিছু নেতা বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করছেন। কমিটির দুটি বড় পদের প্রতি সবার আগ্রহ থাকে। কিন্তু দুটি পদ তো অনেককে দেওয়া যায় না। দলীয় স্বার্থে সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে চাই। দলের জন্য কাজ করলে দলীয় পদ আপনা–আপনি আসে। সবাই দলের জন্য কাজ করবেন—এটাই প্রত্যাশা।’