ইট–পাথরের দালানের ভিড়ে জলপিপি পাখির সংসার
শিল্পাঞ্চলের ব্যস্ত আবাসিক এলাকা। ইট–পাথরের দালানে ভরা ওই এলাকার কিছুটা জলাবদ্ধ। সেই জলাবদ্ধ এলাকায় জন্মেছে কচুরিপানাসহ নানা জলজ উদ্ভিদ। সেখানে দিব্যি সংসার পেতেছে কয়েক জোড়া জলপিপি পাখি।
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার মাওনা চৌরাস্তার আনন্দধারা আবাসিক এলাকায় এই জলপিপি পাখিদের বাস। কয়েক দিন ধরে একটি জলপিপিকে ছানা নিয়ে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে বলে খবর দেন সেখানকার বাসিন্দা আমান উল্লাহ।
গতকাল শুক্রবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণাধীন একটি বহুতল বাড়ির উত্তর পাশে কচুরিপানা ও বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদের ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছে জলপিপি। সঙ্গে চারটি ছানা। পোকামাকড় ও জলজ নানা কীটপতঙ্গ ধরে ছানাগুলোকে খাওয়াচ্ছে জলপিপি। জলপিপির শরীরের বেশির ভাগজুড়ে নীলচে ধুসর রং। মাথায় দুই পাশে সাদা লম্বা দাগ। এই দাগ তাদের ঘাড় পর্যন্ত বিস্তৃত। এর লম্বা পায়ের রং মেটে। পাখনা কিছুটা জলপাই রঙের। ঠোঁটের রং সাদাটে। আর এর চোখ গাঢ় কালো।
অল্প আওয়াজ পেলেই খুব দ্রুত জলের পাশে কচুরিপানা ও ঝোপঝাড়ের ভেতর গিয়ে ছানাগুলোকে পাখনার আড়ালে রেখে লুকিয়ে পড়ে। ছানাগুলো দেখতে কিছুটা মুরগির বাচ্চার মতো হলেও তাদের গলা তুলনামূলক অনেক লম্বা। লম্বা পা ফেলতে ফেলতে খাবার খুঁজে তারা। জলপিপি জলাশয়ের কচুরিপানার ফাঁকফোকরে খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। বিকেলে জলপিপির ছানাগুলোর ওপর দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর উড়ে যাচ্ছিল ফিঙে। প্রতিবার ফিঙেকে উড়ে আসতে দেখলেই বড় জলপিপিটি শব্দ করে ছানাদের কাছে ডেনে নিচ্ছিল। ছানারাও দ্রুত দৌড়ে এসে পাখনার নিচে আশ্রয় নিচ্ছিল।
পাখি বিশারদদের মতে, ডিমে তা দেওয়া, ছানাদের খাবার জোগাড় করা ও তাদের বড় করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব পালন করে পুরুষ জলপিপিরা। পৃথিবীতে আট ধরনের জলপিপি আছে। এগুলোকে জলময়ূরও বলা হয়। বাংলাদেশে দুই ধরনের জলপিপি দেখা যায়। ঘন পদ্মপাতা, হোগলা বন কিংবা কচুরিপানার ফাঁকফোকরে তারা বাসা বানায়। বিভিন্ন উদ্ভিদের ছোট ছোট ডালপালা সংগ্রহ করে বাসা বানাতে সময় লাগে তিন থেকে চার দিন। স্ত্রী জলপিপি ডিম দিয়ে অন্যত্র চলে যায়। ২২ থেকে ২৪ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। পুরুষ জলপিপির তুলনায় স্ত্রী জলপিপির আকার বড়। ভারত, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, বাংলাদেশসহ আফ্রিকা ও উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় এই জলপিপিদের আবাস।
জলাশয়ের পাশের বাসিন্দা আমান উল্লাহ বলেন, প্রায় বছর ধরে জলপিপিগুলোকে এখানে বাসা তৈরি করতে দেখা যাচ্ছে। পূর্ণবয়স্ক জলপিপি দেখা গেলেও ছানাগুলো সহজে চোখে পড়ে না। খাবার খাওয়ার জন্য বের হলেও ছানাগুলো কচুরিপানার আড়াল দিয়ে ঘোরাফেরা করে। স্থানীয় লোকজন পাখিগুলোকে বিরক্ত করে না। এ জন্য এর শহুরে পরিবেশেও দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে তারা।
রিপন মিয়া নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, চারদিকে এত শব্দ ও কোলাহলের মধ্যে পাখিগুলোর বাস সত্যিই বিচিত্র।