২৩ বছর পর মুক্ত হচ্ছে বন্দী ভালুক ‘জাম্বু’
বনে কুড়িয়ে পাওয়া পাওয়ার পর ছোট একটি চিড়িয়াখানার সংকীর্ণ খাঁচায় জায়গা হয়েছিল তার। এরপর নিঃসঙ্গ অবস্থায় দীর্ঘ ২৩ বছর কেটেছে। অযত্নে-অবহেলায় থাকার কারণে ঠিকমতো খাবারও জোটেনি। রাঙামাটি শহরের জেলা পরিষদের মিনি চিড়িয়াখানার একমাত্র ভালুক ‘জাম্বু’ অবশেষে মুক্তি পাচ্ছে কষ্টকর বন্দিজীবন থেকে। আজ সোমবার বিকেলে বন বিভাগের একদল কর্মী এসে নিয়ে যায় প্রাণীটিকে। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের মুক্ত পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হবে তাকে। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করতে পারবে জাম্বু। নিঃসঙ্গ জাম্বু এখন সঙ্গীও পাবে সেখানে।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে দুর্গম পাহাড়ি বনে একজন বাঁশ আহরণকারী একটি ভালুকের ছানা কুড়িয়ে পান। পরে ছানাটি উদ্ধার করে এক বছর লালনপালন করেন তিনি। ২০০২ সালে রাঙামাটি শহরের মিনি চিড়িয়াখানা চালু হলে সেখানে নিয়ে আসা হয় প্রাণীটিকে। নাম রাখা হয় জাম্বু। এরপর তার জীবনে দুর্দশার শুরু। মূলত ফল, লতা-পাতা ও মাংস তার খাবার হলেও শুধু দেওয়া হতো ভাত আর দুধ। মাঝেমধ্যে সে খাবারও মিলত না। অযত্নে-অবহেলায় নিঃসঙ্গ দিন কেটেছে তার। আজ দুপুরে জাম্বুকে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে শরীর অবশ করা হয়। পরে একটি লোহার খাঁচায় করে নেওয়া হয় নতুন ঠিকানা ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে।
বন্য প্রাণীবিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাম্বু এশীয় কালো ভালুক। এ ধরনের ভালুকের গড় আয়ু ৩৯ বছর। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী এ প্রজাতির ভালুক বাংলাদেশে বিপন্ন।
জেরা পরিষদ ও বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি জেলা পরিষদ সম্প্রতি বন বিভাগকে চিড়িয়াখানার বন্য প্রাণী হস্তান্তর করার কথা জানিয়ে একটি চিঠি দেয়। অভিজ্ঞ জনবলের অভাবে চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলোর পরিচর্যা হচ্ছিল না। জেলা পরিষদের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আজ বন বিভাগ বন্য প্রাণীগুলো নিয়ে যায়। ভালুক জাম্বু ছাড়াও পাঁচটি বন মোরগ, চারটি বানর, একটি হরিণ, ছয়টি কচ্ছপ ও দুটি শজারু চিড়িয়াখানা থেকে নিয়ে গেছে বন বিভাগ। সেই সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া দেওয়া হয়েছে মিনি চিড়িয়াখানাটি।
বন্য প্রাণী বিভাগের বন কর্মকর্তা দীপান্বিতা ভট্টাচার্য বলেন, ‘জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন চিড়িয়াখানা থেকে আমরা একটি ভালুকসহ ১৯টি বন্য প্রাণী পেয়েছি। সেগুলো কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে পাঠানো হয়েছে। সেখানে বন্য প্রাণীদের নির্দিষ্ট স্থানে রাখা হবে। এরপর উন্মুক্ত স্থানে ছেড়ে দেওয়া হবে।’
জেলা পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা অরনেন্দু ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনবল না থাকায় চিড়িয়াখানায় বন্য প্রাণীদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে অসুবিধা হচ্ছিল। তাই আজ বন বিভাগকে প্রাণীগুলো হস্তান্তর করা হয়।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক এম এ আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, রাঙামাটির চিড়িয়াখানায় একটি ভালুক খাঁচার মধ্যে বহু বছর ধরে বন্দী অবস্থায় ছিল। শুনেছি ভালুকটি ঠিকমতো খাবারও পেত না। ভালুকটিকে সাফারি পার্কে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ভালো ছিল। এশিয়াটিক ব্ল্যাক বেয়ার জাতের এই ভালুকের গড় আয়ু ৩৯ বছর। এই বয়সে মুক্ত পরিবেশে প্রাণীটি ভালো থাকবে।