সৃজনশীলতার চর্চা অবিরাম

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় শিক্ষানুরাগী কিছু মানুষ স্বয়ম্ভর লাইব্রেরি নামে একটি পাঠাগার চালু করেছেন। এখানে বই পড়ার পাশাপাশি সাহিত্য আসর বসে।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার স্বয়ম্ভর লাইব্রেরিতে বই পড়ায় ব্যস্ত পাঠক। সম্প্রতি তোলা ছবিপ্রথম আলো

আধুনিক জীবনের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে অনেকেই বই পড়ার অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছেন। বইয়ের পাতায় এখন আর তেমন সময় কাটে না তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীসহ নানা বয়সী মানুষের। একটা সময় পর্যন্ত যে চোখের দৃষ্টি ছিল বইয়ের পাতায়, এখন তা থাকে স্মার্টফোন, ল্যাপটপের পর্দায়।

এভাবে বই পড়ার অভ্যাস থেকে বর্তমান প্রজন্মের একটি বড় অংশ যখন ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছে ,ঠিক সে সময়ে আলমডাঙ্গায় স্বয়ম্ভর লাইব্রেরি নামের একটি পাঠাগার ঘিরে চলছে বইপড়া আন্দোলন। ১০ বছর আগে ৬১টি বই ও কয়েকজন পাঠক নিয়ে যাত্রা শুরু করে পাঠাগারটি। এখন এখানে বইয়ের সংখ্যা তিন হাজারের বেশি এবং রয়েছেন হাজারখানেক পাঠক। এর নেতৃত্বে রয়েছেন ৩৫ তরুণ-তরুণী, শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবক। নেপথ্যে আছেন একদল মুক্তমনা মানুষ।

পাঠকদের উদ্বুদ্ধ করতে পাঠাগারটিতে রয়েছে বইয়ের বিশাল সম্ভার। পাশাপাশি এখানে রয়েছে দৈনিক প্রথম আলো, ডেইলি স্টার এবং কিশোর আলো, বিজ্ঞানচিন্তা, প্রতিচিন্তাসহ বিভিন্ন পাক্ষিক ও মাসিক সাময়িকী; যা পড়তে পাঠকদের কোনো অর্থ গুনতে হয় না। যে কেউ মুঠোফোনে অথবা অনলাইনে চাহিদা জানালেই পাঠাগারের কর্মী বাবুল আখতার ও স্বেচ্ছাসেবকেরা নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেন ও পড়া শেষে ফেরত নিয়ে আসেন। আর যেসব পাঠক সশরীর পাঠাগারে উপস্থিত হয়ে বই বা সংবাদপত্র পড়েন, তাঁদের জন্য রয়েছে নিখরচায় ইচ্ছেমতো গরম-গরম চা পানের ব্যবস্থা। বিশেষ বিশেষ সময়ে নাশতাও দেওয়া হয়। এখানে নিয়মিত পাঠচক্র ও সাহিত্যপাঠের আসরও বসে।

‘গ্রন্থাগারে বই পড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে আজ ৫ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ২০২৪ পালিত হচ্ছে। জনগণের পাঠাভ্যাস সৃষ্টি ও বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলোর কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে ২০১৮ সাল থেকে প্রতিবছর ৫ ফেব্রুয়ারি দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

‘বই পড়া অভ্যাস উন্নত সংস্কৃতির বাহন’ স্লোগান সামনে রেখে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এনামুল হকের নেতৃত্বে একদল উদ্যমী তরুণ স্বয়ম্ভর লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন। আলমডাঙ্গা শহরের হাই রোডে ছোট দুটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে জিস টাওয়ারে মনোরম পরিবেশে কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।

পাঠাগারটি টিকিয়ে রাখা ও মানোন্নয়নে সমমনা একদল মানুষ নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যাঁরা পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী নতুন নতুন বই, পাঠাগারের ভাড়াসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা খরচ জুগিয়ে চলেছেন। তাঁরা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক রেজওয়ানুল হক বুলবুল, উপসচিব আমিনুর রহমান, রাঙামাটির পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা ফজলে রহমান, ব্যবসায়ী ফজলে নেওয়াজ, দুবাইপ্রবাসী রুহুল কুদ্দুস এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া, রাশেদুল হাসান, মুনছুর আলী ও হজরত আলী।

একটা সময় পর্যন্ত পাঠাগারটি অনেকটাই ভাসমান অবস্থায় ছিল। ২০২০ সালে করোনার সময়ে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যখন বন্ধ, ঠিক সে সময়ে এই পাঠাগারকে কাজে লাগাতে স্নাতকে পড়ুয়া চন্দন পাল, ফিরোজ হাসান, রাহুল দত্ত ও সাবিনা ইয়াসমিন নীলা সদ্য এসএসসি উত্তীর্ণ রাকিব হাসান ও সাব্বির রহমান ফিরোজকে সঙ্গে নিয়ে পাঠাগারটির প্রাণ ফেরাতে উদ্যোগী হন। ফেসবুক পেজে বইয়ের তালিকাসহ পোস্ট দিয়ে বলেন, ‘আপনারা বই পড়তে চাইলে ফেসবুকে নক বা মুঠোফোন নম্বরে কল করুন। আমাদের সদস্যরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাড়িতে বই পৌঁছে দেবেন এবং পড়া শেষ হলে ফেরত নিয়ে আসবেন।’

রাকিব হাসান প্রথম আলোকে জানান, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১০০ পাঠক নিয়ে করোনাকালে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে নিয়মিত পাঠক ৭৮৫। পাঠকের তালিকায় রয়েছেন শিক্ষার্থী, শিশু থেকে বৃদ্ধ, নারী, গৃহবধূ, ব্যবসায়ী ও সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী। শুক্রবারসহ সপ্তাহে সাত দিনই বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত পাঠাগার খোলা থাকে।

স্বেচ্ছাসেবক ফিরোজ হাসান জানান, মাসজুড়ে থাকে নানা পরিকল্পনা। প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার থাকে স্বয়ম্ভর গ্রন্থ আলাপন। এ দিন পাঠকেরা তাঁদের পড়া একটি বই থেকে আলোচনা করেন।