বরাদ্দ হওয়া টাকা শেষ, অ্যাম্বুলেন্স–সেবা বন্ধ 

রোগীদের অন্য সরকারি হাসপাতালে যেতে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিতে হচ্ছে, যাতে খরচ হচ্ছে দ্বিগুণ।

জয়পুরহাট জেলার মানচিত্র

১৫০ শয্যার জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালের চারটি অ্যাম্বুলেন্স চলাচল দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। জ্বালানি তেল কেনার অর্থ বরাদ্দ না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স–সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অন্য সরকারি হাসপাতালে যেতে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিতে হচ্ছে, যাতে খরচ হচ্ছে দ্বিগুণ।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি খাতে বরাদ্দ পাওয়া যায় ২৪ লাখ টাকা। আগে এই বরাদ্দের টাকায় পুরো বছর জ্বালানির চাহিদা মিটত। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়ার পর হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। বর্ধিত দামে জ্বালানি কেনার কারণে অর্থবছর শেষ হওয়ার তিন মাস আগেই (মার্চ মাস) বরাদ্দের টাকায় টান পড়ে। তখন থেকে অ্যাম্বুলেন্স–সেবা কমিয়ে দেওয়া হয়। গত ৮ এপ্রিল থেকে জ্বালানির অভাবে পুরোপুরি অ্যাম্বুলেন্স–সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। জ্বালানি বরাদ্দের জন্য ৫৫ লাখ টাকার চাহিদা দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের আগে বরাদ্দ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এ জন্য অ্যাম্বুলেন্স–সেবা চালু করা যাচ্ছে না।

হাসপাতালের একজন অ্যাম্বুলেন্সচালক বলেন, হাসপাতালের জ্বালানি হিসেবে যে বরাদ্দ দেওয়া, তা দিয়ে চারটি অ্যাম্বুলেন্স, তত্ত্বাবধায়কের একটি জিপগাড়ি ও জেনারেটর চালানো হয়। এগুলোতে জ্বালানি হিসেবে অকটেন ব্যবহার করা হয়। গত মার্চ মাস থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি সীমিত করে। এরপর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের নির্দেশে তারা চারটি অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ রেখেছে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ১০ টাকা। সেই অনুযায়ী জয়পুরহাট থেকে বগুড়ার নির্ধারিত ভাড়া ১ হাজার ২০০ টাকা, রংপুরের ভাড়া ২ হাজার ৪০০ টাকা, দিনাজপুরের ভাড়া ১ হাজার ৮২০ টাকা, রাজশাহীর ভাড়া ২ হাজার ৬৪০ টাকা এবং ঢাকার ভাড়া ৬ হাজার ৮০০ টাকা।

হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সচালক কাজল হোসেন বলেন, অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি তেলের বরাদ্দ শেষ হয়েছে। বাকিতে জ্বালানি কিনতে রাজি হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এপ্রিলের ৮ তারিখ থেকে অ্যাম্বুলেন্স–সেবা পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে।

গত বুধবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বর্ধিত নতুন সাততলা ভবনের নিচের ফাঁকা জায়গায় তিনটি অ্যাম্বুলেন্স ও হাসপাতালের পাশে আরেকটি উপহারের অ্যাম্বুলেন্স দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে বেসরকারি (ব্যক্তিমালিকানাধীন) সাতটি অ্যাম্বুলেন্স রাখা। এসব অ্যাম্বুলেন্সের চালকেরা রোগীদের জন্য অপেক্ষা করছেন।

মিঠাপুর এলাকার বাসিন্দা সুশান্ত কুমার মন্ডল বলেন, ‘আমার বাবাকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। চিকিৎসকেরা ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স–সেবা বন্ধ। প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে বাবাকে ঢাকায় নিয়ে গেছি।’ 

পাঁচবিবি উপজেলার কয়তাহার গ্রামের বাসিন্দা জুয়েল রানা বলেন, ‘বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে বগুড়ায় নিয়ে গিয়েছি। এতে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চেয়ে ৮০০ টাকা ভাড়া বেশি লেগেছে। তেলসংকটে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চলাচল বন্ধ থাকবে, এমনটা মেনে নেওয়া যায় না।’ 

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সরদার রাশেদ মোবারক প্রথম আলোকে বলেন, জ্বালানির বরাদ্দ না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স–সেবা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। এ কারণে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স–সেবা দেড় মাস থেকে বন্ধ। ৫৫ লাখ টাকা জ্বালানির বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে আবারও হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স–সেবা চালু হবে।