শেরপুরে হামলায় বিএনপি নেতার মৃত্যুর পর প্রতিপক্ষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ
শেরপুর সদর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় বিএনপি নেতা গোলাম জাকারিয়া বাদলের (৪৭) মৃত্যুর ঘটনায় কোনো মামলা বা কেউ আটক হয়নি। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এর আগে ওই দিন বিকেলে সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের ভীমগঞ্জ এলাকায় তাঁর ওপর হামলা হয়।
বিএনপি নেতা গোলাম জাকারিয়াকে হত্যার ঘটনায় জড়িত তিনজনের বাড়িতে তাঁর অনুসারীরা আগুন দিয়েছে। জাকারিয়া মারা যাওয়ার সংবাদ পাওয়ার পর বুধবার সকালে ভীমগঞ্জ এলাকার আবদুল জলিল, আক্কাস আলী ও আবদুল মোতালেবের বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে শেরপুর থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
শেরপুর ফায়ার স্টেশনের ওয়্যারহাউস পরিদর্শক মো. নাসিম এ তথ্য জানিয়েছেন।
নিহত জাকারিয়া বাদল সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের ভীমগঞ্জ গ্রামের মৃত আবদুল আজিজের ছেলে। তিনি সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও শেরপুর সরকারি কলেজের ছাত্র সংসদের সাবেক সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ছিলেন। গোলাম জাকারিয়া খুন হওয়ায় তাঁর পরিবার ও স্বজনেরা শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন।
জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সদর উপজেলার ভীমগঞ্জ গ্রামে জাকারিয়া বাদলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জাকারিয়া বাদলের মা মাহফুজা খাতুন ছেলের মৃত্যুর সংবাদ শুনে প্রায় অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন। বাড়ির আঙিনায় প্রতিবেশী ও স্বজনেরা ভিড় করছেন। চিৎকার করে কাঁদছিলেন জাকারিয়ার ফুফু ইসমত আরা ও ছোট বোন আজিজুন্নাহার।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত গোলাম জাকারিয়ার ফুফাতো ভাই মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাই গোলাম জাকারিয়া রাজনীতির পাশাপাশি ওষুধের ব্যবসা ও সমাজসেবার কাজ করতেন। কামারিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক লুৎফর রহমান চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ড করতেন। এমনকি আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ও কামারিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নূরে আলম ভুট্টোর (বর্তমানে জেলা কারাগারে বন্দী) সঙ্গে বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান যোগাযোগ রাখতেন। জাকারিয়া লুৎফরের এসব নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় বেশ কিছু দিন ধরে তাঁর (লুৎফর) সঙ্গে ভাইয়ের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।
এর জের ধরে লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে আক্কাছ আলী, আবদুল জলিল, লালনসহ ১৫ জন সন্ত্রাসী মঙ্গলবার বিকেলে ধারালো অস্ত্র নিয়ে জাকারিয়া ও তাঁর সহযোগীদের ওপর হামলা চালান। তাঁরা জাকারিয়াসহ তিনজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। পরে জাকারিয়া ঢাকায় মারা যান। আর সোহাগ আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জাকারিয়া ও তাঁর সহযোগীদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য কামারিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক লুৎফর রহমানের ভীমগঞ্জ গ্রামের বাড়িতে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর স্ত্রী মাজেদা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সময় তাঁর স্বামী পাশের গ্রামের লেবুবাগানে কাজ করছিলেন। তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুবায়দুল আলম বুধবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় মামলা বা কেউ আটক হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই এলাকায় পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এলাকায় টহল দিচ্ছেন। পুলিশ ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে এবং জড়িত ব্যক্তিদের আটকের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে জাকারিয়া বাদলের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ভীমগঞ্জ কলেজ মাঠে তাঁর জানাজা হওয়ার কথা রয়েছে।
বিএনপি নেতা গোলাম জাকারিয়ার ওপর হামলার বিষয়ে আজ বুধবার প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘শেরপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত বিএনপি নেতার মৃত্যু’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।