মুঠোফোনে লাউডস্পিকার দিয়ে চাঁদা চাচ্ছিলেন যুবদল নেতা, ‘ভিডিও করায়’ মারধর

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের যুবদল নেতা আবদুর রহিম
ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে মুঠোফোনে লাউডস্পিকার দিয়ে চাঁদা চাইছিলেন যুবদলের এক নেতা। এ দৃশ্য ঘটনাস্থলে থাকা কেউ একজন মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন। পরে একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করলে মুহূর্তেই মধ্যে সেটি ছড়িয়ে পড়ে। চাঁদা দাবির ঘটনায় আবদুর রহিম নামের ওই যুবদল নেতাকে এরই মধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এদিকে আবদুর রহিমের সন্দেহ, ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি ধারণ করেছেন জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ী। পরে আবদুর রহিমের নেতৃত্বে রড ও লাঠিসোঁটা দিয়ে জসিমকে বেধড়ক মারধরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলে পুলিশ আবদুর রহিমকে গ্রেপ্তার করেছে।

গতকাল বুধবার রাতে চাঁদা দাবির ভিডিও ছড়িয়ে পড়া এবং ব্যবসায়ী জসিমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আবদুর রহিমকে কুমিল্লার আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম ফজলুল হক। বুধবার রাতেই তাঁকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

গ্রেপ্তার যুবদল নেতা আবদুর রহিম নাঙ্গলকোট উপজেলার মোড্ডা গ্রামের প্রয়াত ইয়াকুব আলীর ছেলে। তিনি মৌকরা ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি। অপর দিকে, হামলার শিকার জসিম উদ্দিন উপজেলার মৌকরা ইউনিয়নের গোমকোট বাজারের আসবাব ব্যবসায়ী। তিনি উপজেলার হেসাখাল ইউনিয়ন আইনজিয়াপাড়া তেতৈয়া গ্রামের প্রয়াত শহীদ উল্ল্যার ছেলে। বুধবার রাতে নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার শিকার হন তিনি। পরে আহত জসিমকে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

নাঙ্গলকোট থানার ওসি এ কে এম ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনকে মারধরের ঘটনায় তিনি বাদী বুধবার রাতে আবদুর রহিমসহ অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে রাতেই আবদুর রহিমকে আটক করে। তাঁকে আজ দুপুরে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কুমিল্লার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে যুবদল নেতা আবদুর রহিমের হামলার শিকার ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন
ছবি: সংগৃহীত

‘তোর কোন আব্বা আইয়ে আমরা ছাইয়ুম’

ভিডিওতে যে ঘটনাটি দেখা যায়, সেটি নাঙ্গলকোটের মৌকরা ইউনিয়নের গোমকোট এলাকায় ঘটে। সেখানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে রেলওয়ের নির্মাণাধীন একটি সেতুর এক সাব ঠিকাদারের কাছে মুঠোফোনে লাউডস্পিকার দিয়ে চাঁদা দাবি করছিলেন যুবদল নেতা আবদুর রহিম। ওই ঘটনার ২ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বুধবার রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে আবদুর রহিমকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনে ২০ হাজার টাকা দিবেন।’ এ সময় অপর প্রান্ত থেকে ঠিকাদার বলেন, ‘আপনি চাঁদাবাজি করছেন। আমার তরফ থেকে যেটা দেব, এটা নিবেন।’ জবাবে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমনের কাছে যদি কেউ চাঁদাবাজি করত, তাইলে আপনে বহুদিন আগেই এখান থেকে ধাই যানগোই লাগত (পালিয়ে যাওয়া লাগত)।’ পরে ঠিকাদার যুবদল নেতাকে বলেন, ‘আমি কী করি, আপনে চিটাগংয়ে (চট্টগ্রাম) খবর নেন।’ জবাবে আবদুর রহিম বলেন, ‘আপনে চিটাগাংয়ের বহুত বড় নেতা। আমরা কি আপনার কাছে চাঁদাবাজি করছি?’ এ সময় অপর প্রান্ত থেকে ঠিকাদারকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি আমার কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নেন।’ আবদুর রহিম আবার বলেন, ‘প্রোগ্রামের খরচ হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা...ওকে।’ একপর্যায়ে আবদুর রহিমকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতে শোনা যায়।

ঘটনার সময় আবদুর রহিমের পাশে উপস্থিত ছিলেন ঠিকাদারের একজন লোক। ঠিকাদারের সঙ্গে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে একপর্যায়ে আবদুর রহিম বলে ওঠেন, ‘আজকে তাঁকে (ঠিকাদারের লোককে) বাঁধি রাখ। হেতের আব্বা আইতো হইব। তোর কোন আব্বা আইয়ে আমরা ছাইয়ুম। ওই তাঁর ফোন আটক কর।’ এ সময় ঠিকাদারের ওই লোকের গায়ে আবদুর রহিমকে হাত তুলতেও দেখা যায়।

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি মৌকরা ইউনিয়ন বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও স্থানীয় সাবেক সাংসদ আবদুল গফুর ভূঁইয়া। ওই অনুষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী, ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেন যুবদলের নেতা আবদুর রহিম।

বুধবার রাতে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ায় এসব প্রসঙ্গে অভিযুক্ত যুবদল নেতা আবদুর রহিমের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। এদিকে বুধবার রাতেই দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগে আবদুর রহিমকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ যুবদলের দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. গিয়াস উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়।

আজ দুপুরে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদল সদস্যসচিব ফরিদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবদুর রহিমের চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা অবগত হয়েছেন। পরে কেন্দ্রের নির্দেশে প্রাথমিক সদস্য পদসহ তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বুধবার রাত থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে।’