দিনে শিল্পী, রাতে রিকশাচালক ময়মনসিংহের আজাদ

সংসার চালাতে গান গাওয়া ও নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি রাতে রিকশা চালান আজাদ মিয়া। ময়মনসিংহ নগরের দুর্গাবাড়ি রোড এলাকায়।

শীতের রাতে কুয়াশার সঙ্গে হিম বাতাস। এই ঠান্ডার মধ্যেও রিকশা নিয়ে রাতভর ময়মনসিংহ শহরের ঘোরেন একজন চালক। তাঁর নাম মো. আজাদ মিয়া (৪৪)। রাতের এই রিকশাচালক ময়মনসিংহ নগরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পরিচিত বাউল শিল্পী ও অভিনেতা হিসেবে। করোনাকাল থেকে রাতে রিকশা চালান তিনি।

আজাদ মিয়া ময়মনসিংহ নগরের আর কে মিশন রোডের ছত্রিশ বাড়ি কলোনির বাসিন্দা। স্ত্রী, উচ্চমাধ্যমিকে পড়ুয়া ছেলে ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার। তিনি নিজে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। পরিবারে অভাবের কারণে আর পড়ালেখা করা হয়নি। দাদা উমেদ আলী ছিলেন বাউল গানের ভক্ত, নিজেও বাউল গান করতেন। দাদাকে দেখে ছোটবেলা থেকেই বাউল গানে আকৃষ্ট হন আজাদ। বিভিন্ন মাজারে, মঞ্চনাটকে কিংবা বাউল গানের আসরে তিনি গান করতেন। ২০১৬ সালে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের রিয়েলিটি শোতেও যান। সে সময় ময়মনসিংহ ছায়ানটের একজনের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে মঞ্চনাটকের জগতে যাত্রা শুরু হয় তাঁর।

গত রোববার রাত ১২টার দিকে নগরের দুর্গাবাড়ি সড়কে দেখা হয় আজাদ মিয়ার সঙ্গে। তখন কণ্ঠে ছিল, ‘আমি অকারণে তুলসীর মূলে জল ঢালিলাম, তার দেখা না পাইলাম, শুধু ভালোবাসিলাম’ গানটি। তিনি বলেন, ‘বাবার ইচ্ছা ছিল আমাকে গান শেখানোর। কিন্তু আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় শেখাতে পারেননি। স্বপ্ন ছিল শিল্পী হব, গান করব; কিন্তু অভাবের কারণে তা হয়নি। আমি নিজের আগ্রহ থেকে ঘুরে ঘুরে যত দূর শিখেছি, তাতে বড় শিল্পী হতে পারিনি। ভাগ্যচক্রে এখন রিকশাচালক।’

আজাদ মিয়া বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে ফার্নিচারমিস্ত্রি হিসেবে কাজ শুরু করি। নিজের একটি ব্যবসা থাকলেও করোনার সময় তা মার খায়। প্রায় চার লাখ টাকা বাকি আর তোলা যায়নি। এর মধ্যে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ি। নিজের জীবন–সংসার বাঁচিয়ে রাখতে রিকশা চালানো শুরু করি। শুরুতে ভাড়ায় একটি রিকশা চালালেও পরে ৯০ হাজার টাকায় নিজেই একটি রিকশা কিনেছি।’

শিল্পীজীবনের বিষয়ে আজাদ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে মনের তৃপ্তির জন্য গান করতাম। কিন্তু গ্রামে এখন আগের মতো গানের আসর আর হয় না। নাটকও দিন দিন কমছে। তবে এখনও মাঝেমধ্যেই নাটকে অভিনয় করি বিভিন্ন চরিত্রে।’

রাতভর রিকশা চালানোর কারণ হিসেবে আজাদ মিয়া বলেন, ‘সমাজে সম্মান নিয়ে বাঁচি। গান করি, অভিনয় করি, কিন্তু পেটের দায়ে রিকশা চালাতে হয়। রাতে শহরে যানজট কম থাকে, রাস্তা খালি থাকে, সে সময় রিকশা চালাতে ভালো লাগে। প্রতি রাতে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা উপার্জন হয়। কষ্ট করে সন্তানদের পড়ালেখা করাচ্ছি যেন ভালো কিছু করতে পারে। আমার মতো যেন রিকশা চালাতে না হয়।’