রাজশাহীতে এনসিপির সংবাদ সম্মেলনে যাওয়া সাংবাদিকদের ‘তালা মেরে’ আটকে রাখার হুমকি

এনসিপির সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী মহানগর জাতীয় যুবশক্তির দুই নেতা সাংবাদিকদের কক্ষে তালা মেরে আটকে রাখার হুমকি দেন। আজ সোমবার বিকেলে রাজশাহী পর্যটন মোটেলেছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জেলা কমিটির সংবাদ সম্মেলনে যাওয়া সাংবাদিকদের কক্ষে তালা মেরে আটকে রাখার হুমকি দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে রাজশাহী পর্যটন মোটেলে এনসিপির সংবাদ সম্মেলন চলাকালে দলটির যুব সংগঠন জাতীয় যুবশক্তির দুই নেতা উপস্থিত হয়ে এই হুমকি দেন।

এনসিপির জেলা কমিটি গঠনের পর আজ আহ্বায়ক ও কমিটির অন্য সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। তবে নতুন কমিটির আহ্বায়ককে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বাইরে আরেকটি অংশ বিক্ষোভ শুরু করে। সংবাদ সম্মেলন চলাকালে এক পর্যায়ে বাইরে থেকে দুজন এসে সাংবাদিকেরা বের না হলে কক্ষে আটকে রাখার হুমকি দেন। তাঁরা জাতীয় যুবশক্তির রাজশাহী মহানগর কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব সুয়াইব আহমেদ ও মুখ্য সংগঠক মো. মেহেদি হাসান।

সংবাদ সম্মেলন চলাকালে সুয়াইব আহমেদ সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই সাংবাদিক যাঁরা আছেন, এটা যদি বন্ধ না করেন, আপনাদেরসহ আমরা তালা মেরে দেব। আমরা কিন্তু এখানে তালা মেরে দেব। আমরা চাই না সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো রকম দুর্ব্যবহার করতে।’

তাঁর পাশে থাকা মো. মেহেদি হাসান এ সময় বলেন, ‘আমি লক করে দিমু কিন্তু। বাইরে সবাই বসে আছে, আপনারা এখানে...আপনাদের কানে কথা যাচ্ছে না।’

এমন বক্তব্যের পর সাংবাদিকেরা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান। তাঁরা জানতে চান, কেন তালা মারা হবে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সুয়াইব ও তাঁর সঙ্গীরা দৌড়ে বাইরে চলে যান। সাংবাদিকেরাও তাঁদের পিছু নেন। পর্যটন মোটেল প্রাঙ্গণে বেশ কিছুক্ষণ উত্তপ্ত পরিস্থিতির তৈরি হয়।

পরে সুয়াইব সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চান। তিনি নিজেকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহার করতে চাই না। আপনারা বের হয়ে যান, নাহলে আমরা তালা মেরে দেব—এটা রাগের মাথায় বলেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভেতরে যারা আছে, তাদের নিয়ে এই কমিটিকে আমরা সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছি। সেখানে কী হচ্ছে, তা আমরা জানি না। সে কারণে বাইরে থেকে আমাকে পাঠানো হয়েছে, যেন ভেতরের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাংবাদিকদের অপমান করার উদ্দেশ্য ছিল না। যদি ভুল হয়ে থাকে, আমি ক্ষমা চাই।’

সুয়াইবের বিরুদ্ধে গত বছরের ৫ আগস্টের পর নগরের আসাম কলোনিতে দুই নারীকে খুঁটিতে বেঁধে মারধরের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেন থামাতে ঢিল মারারও অভিযোগ রয়েছে। সাংবাদিকেরা এসব বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর এনসিপির আহ্বায়ক মো. মোবাশ্বের আলী বলেন, ‘বিব্রতকর, দুঃখজনক ও অপছন্দনীয় ঘটনা ঘটেছে। সবই ঘটতে পারে, কিন্তু সব জিনিসের সৌন্দর্য থাকতে হবে। বাচ্চা বাচ্চা ছেলে সব। তারা যুবশক্তি করে। এই কমিটি ঢাকা থেকে করে দিয়েছে।’ সুয়াইবের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আজকেই কিছু অভিযোগ শুনলাম। বিষয়গুলো কেন্দ্রে জানানো হবে। তাঁরা ব্যবস্থা নিবেন।’

কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব ও পদত্যাগ

গত শনিবার রাতে ১১৪ সদস্যবিশিষ্ট এনসিপির রাজশাহী জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সাইফুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও মো. রনিউর রহমানকে সদস্যসচিব করা হয়। কমিটি ঘোষণার পরপরই যুগ্ম সদস্যসচিব মো. জিহান মোবারক সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগ করেন। এরপর আজ সোমবার বিকেলে পর্যটন মোটেলের সামনে আরও পাঁচ সদস্য কমিটি থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের কথা জানান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজশাহীর আলুপট্টি মোড়ে যুবলীগ কর্মী রুবেলকে দুই হাতে গুলি ছুড়তে দেখা গিয়েছিল। সম্প্রতি সেই রুবেলের সঙ্গে সাইফুল ইসলামের একটি ছবি প্রকাশ্যে আসে। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সেটা ছিল একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ছবি। যদি কখনো কোনো রাজনৈতিক মিছিল, সাংগঠনিক আলোচনা বা কোনো পদ থাকে, তবেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা বলা যাবে। আমার কোনো পদ ছিল না।’

এ বিষয়ে এনসিপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমনকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।