মেয়েদের কষ্ট দেখলে বুক ঢিপঢিপ করে, ব্যথা হয়

ডেঙ্গু আক্রান্ত দুই মেয়ে নুসরাত ও ইশরাতের পাশে বাবা নুরুল আলম। গতকাল সোমবার বিকেলে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু ওয়ার্ডে
ছবি: প্রথম আলো

হাসপাতালে তিন বছর বয়সী নুসরাতের সঙ্গে এক বিছানায় শুয়ে ছিল তার বড় বোন সাত বছরের ইশরাত। দুজনের হাতেই ক্যানুলা লাগানো। শিরায় দেওয়া হচ্ছিল স্যালাইন। দুজনের শিয়রে বসে তাদের বাবা নুরুল আলম। চোখে-মুখে দুশ্চিন্তা আর রাত জাগার ছাপ। বললেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত দুই মেয়ের যন্ত্রণা দেখতে হচ্ছে তাঁকে। মেয়েরা ছটফট করলে তাঁর বুক ঢিপঢিপ করে, ব্যথা হয়।

গতকাল সোমবার টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেল, দুই বোন নুসরাত আলম ও ইশরাত আলম পাশাপাশি শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। ছোট বোন নুসরাতের অণুচক্রিকা ও রক্ত চাপ কমে যাচ্ছে। আর বড় বোন ইশরাতের জ্বর পড়ছে না। দুই মেয়ের এমন অবস্থা নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন তাদের বাবা নুরুল আলম ও মা মুজিকা আক্তার।

নুসরাত ও ইশরাতের বাবা নুরুল আলম কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার পুরাতন পল্লানপাড়ার বাসিন্দা ও উপজেলা পিকআপ শ্রমিক কল্যাণ সমবায় সমিতির সভাপতি। গত শনিবার থেকে তারা ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। নুরুল আলম বলেন, দুই দিন ধরে মেয়েদের জন্য তিনি কাজে বের হননি। তাদের মায়ের সঙ্গে সারাক্ষণই হাসপাতালে আছেন। তবু দুশ্চিন্তা কাটছে না কিছুতেই।

ডেঙ্গু আক্রান্ত ইশরাত আলম টেকনাফ বাসস্টেশন এলাকার আইডিয়াল বালিকা মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার ছোট বোন নুসরাত এখনো স্কুলে যায় না। তাদের বাবা নুরুল আলম বলেন, দুই বোন সারাক্ষণ বাড়ি মাতিয়ে রাখে। আর এখন দুজনের মুখে কোনো কথা নেই। কেমন নিস্তেজ হয়ে গেছে।

মা মুজিকা আক্তার সারাক্ষণ চেষ্টা করছেন মেয়েদের কিছু খাওয়াতে। তিনি বলেন, দুই মেয়ের শরীরে জ্বর। কোনো খাবারই তারা মুখে নিচ্ছে না। মাল্টা, ডাব, ফলের রস কোনো কিছুই মুখে তুলতে চাইছে না তারা।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত নুসরাত ও ইশরাতসহ ৫০৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন চারজন ও আইসিডিডিআরবির হাসপাতালে একজন।

আইসিডিডিআরবির যোগাযোগ কর্মকর্তা আশরাফুল আনোয়ার বলেন, কিছুদিন ধরে ডেঙ্গু রোগীর চাপ কমতে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত ৯২ জনকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আজ একজন রোগী ভর্তি আছেন।

টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রণয় রুদ্র বলেন, শুরু পর থেকে মাঝামাঝি সময়ে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেশি ছিল। তখন প্রায় প্রতিদিন জ্বর, মাথাব্যথা ও শরীরব্যথা নিয়ে রোগী এসেছেন হাসপাতালে। রক্ত পরীক্ষায় তাদের অনেকের শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে দিন দিন রোগীর সংখ্যা কমে আসছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক চিকিৎসক এনামুল হক বলেন, বৃষ্টি কমে যাওয়ায় ডেঙ্গু রোগের প্রভাবও কমতে শুরু করেছে। তারপরও বাড়ির আশপাশে আঙিনায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এবার উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কোনো স্থানীয় বাসিন্দার মারা যাওয়ার তথ্য হাসপাতালে নেই।