নাশকতা ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো এবার মানিকগঞ্জে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এতে জেলা বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের ১৫ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে মানিকগঞ্জ-ঝিটকা সড়কে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাসানুর ইসলাম মামলাটি করেন।
এ মামলায় গতকাল সোমবার রাতে আটক জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ পারভেজ ও ছাত্রদলের কর্মী জসিম উদ্দিন ওরফে আকাশকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। মামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামি ছাড়া পুলিশ অন্য আসামিদের পরিচয় জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিএনপির গণসমাবেশে জনস্রোত ঠেকাতে সরকার বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দিতে শুরু করেছে।
সদর থানা-পুলিশ জানায়, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের অদূরে মানরা সেতুর পূর্ব পাশে সেওতাগামী পাকা সড়কের ওপর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১৫ নেতা-কর্মীসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১২ জন দলীয় বিভিন্ন স্লোগানে বলতে থাকেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমবেত হয়ে ঢাকাসহ সারা দেশ অচল করে দেওয়া হবে। এ সময় পাশে থাকা হাসানুর ইসলাম (মামলার বাদী) সদর থানার পুলিশকে বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। একপর্যায়ে সেখান থেকে যুবদল নেতা মাসুদ পারভেজ ও ছাত্রদল কর্মী জসিম উদ্দিনকে আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনায় আজ দুপুরে হাসানুর ইসলাম বাদী হয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার বিষয়ে চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। বাড়িতে গিয়েও পাওয়া যায়নি। তবে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রউফ সরকার। তিনি জানান, গ্রেপ্তার দুজনকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। অন্যদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মামলাটিকে ‘গায়েবি’ হিসেবে উল্লেখ করে জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা বলেন, বিএনপির সঙ্গে মানুষ সম্পৃক্ত হয়েছে। বিএনপির দাবিগুলো জনতার দাবিতে রূপ নিয়েছে। সরকারের নানা বাধা ও প্রতিবন্ধকতার পরও প্রতিটি বিভাগীয় সমাবেশ জনস্রোতে রূপ নিয়েছে। জনতার এ স্রোত দেখে আওয়ামী লীগ উন্মাদের মতো আচরণ করছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ বানচাল করতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে এবং তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
এদিকে গত শনিবার রাতে স্থানীয় বিএনপির ১৩ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থানায় মামলা করা হয়েছে। উপজেলার সিএনজিচালিত এক অটোরিকশাচালক মামলাটি করেন। মামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে ভীতি সঞ্চার, একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় অগ্নিসংযোগ ও আর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় সিঙ্গাইর পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল গফুরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।