আসামির সঙ্গে নামের মিল থাকায় ডাকাতির মামলার ‘নিরপরাধ’ ব্যক্তি কারাগারে
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় ডাকাতির মামলার আসামির সঙ্গে নামের মিল থাকায় মো. ফিরোজ আলম হাওলাদার (৪৬) নামের এক ব্যক্তি ফরিদপুরে কারাভোগ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর স্ত্রী। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঝালকাঠি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন সুরাইয়া বেগম নামের ওই নারী। এ সময় উপস্থিত ছিল ফিরোজ-সুরাইয়া দম্পতির তিন মেয়ে।
লিখিত বক্তব্যে সুরাইয়া বেগম বলেন, চলতি বছরের ৮ মার্চ বরিশাল র্যাব-৮ নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের বৈশাখিয়া চৌমাথা বাজার থেকে মো. ফিরোজ আলম হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে। রাতেই তাঁকে নলছিটি থানায় সোপর্দ করা হয়। র্যাব সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তি ২০০৭ সালের মার্চে ফরিদপুরে সংঘটিত একটি বাস ডাকাতির মামলার আসামি। সেই মামলায় ২০১০ সালে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত আসামি ফিরোজাল ওরফে জুয়েলকে (৫০) ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন।
সুরাইয়া বেগমের অভিযোগ, সাজাপ্রাপ্ত ওই আসামির নাম ফিরোজাল ওরফে জুয়েল (৫০)। মামলায় আসামি হিসেবে তাঁর নাম প্রথমে জুয়েল লেখা হয়। পরে অভিযোগপত্রে ফিরোজাল ওরফে জুয়েল লেখা হয়। সেখানে তাঁর বাবার নাম লেখা হয় মৃত নুর মোহাম্মদ ওরফে মুন্নু মিয়া। ঠিকানা দেওয়া হয় নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের বৈশাখীয়া গ্রাম। ফিরোজাল ওরফে জুয়েল ২০০৩ সালে ফরিদপুরের ১ নম্বর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারাধীন একটি মামলায় ৭ মাস কারাভোগ করে জামিনে পলাতক ছিলেন। ২০০৭ সালের ওই বাস ডাকাতির মামলায় পুলিশ তাঁকে আসামি করে। সেই মামলায় ১০ বছরের সাজা হয় তাঁর।
অন্যদিকে সেই ডাকাতি মামলায় কারাগারে থাকা নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের নুর মোহাম্মদের ছেলে মো. ফিরোজ আলম হাওলাদার ১৯৭৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে ঢাকার তেজগাঁওয়ের তেজতুরী বাজারে অবস্থিত আহছানউল্লাহ ইনস্টিটিউট অব টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল এডুকেশন নামক একটি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরি করেন।
সুরাইয়া বেগম বলেন, শবে বরাতের ছুটিতে বাড়িতে এলে তাঁর স্বামী ফিরোজ আলম হাওলাদারকে র্যাব গ্রেপ্তার করে। আর এ ঘটনার পর আসল আসামি ফিরোজাল ওরফে জুয়েল এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সুরাইয়া বেগম বলেন, ফিরোজ আলম হাওলাদারের আইনজীবী স্বপন সাহা গত ২৩ মে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফিরোজ আলমের জাতীয় পরিচয়পত্র, কর্মস্থলের হাজিরা খাতা ও প্রতিষ্ঠানপ্রধানের প্রত্যয়নপত্র আদালত ও ফরিদপুরের বিভিন্ন থানায় জমা দিয়ে প্রমাণের চেষ্টা করেন তিনি নির্দোষ। ফিরোজ আলম হাওলাদার এবং ফিরোজাল ওরফে জুয়েল এক ব্যক্তি নন। আদালত এই আবেদন আমলে নিয়ে নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ৩০ মের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। তবে নলছিটি থানার ওসি মুহা. আতাউর রহমান আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে জানিয়েছেন, মামলায় আটক ফিরোজ আলমই আসল আসামি ফিরোজাল ওরফে জুয়েল।
সুরাইয়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী নির্দোষ। তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র ও অন্য প্রমাণাদি থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় সে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। আমি তিন সন্তান নিয়া কষ্টে আছি। আমার স্বামীকে মুক্তি দিন।’
এ বিষয়ে নলছিটি থানার ওসি মুহা. আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেদিন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, সেদিনই ফিরোজ আলম পুলিশের কাছে দোষ স্বীকার করেছিলেন। আমাদের প্রতিবেদন আদালত যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেবেন।’
ফিরোজ আলম হাওলাদারের আইনজীবী স্বপন সাহা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের তদন্তে নাম-ঠিকানা সঠিকভাবে যাচাই না হওয়ায় প্রকৃত আসামি আড়ালে থেকে গেছেন। তাঁরা পুলিশের এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দায়ের করবেন।