শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হয় না দুই বছর, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ফাইল ছবি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদের (নীল দল) শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে দুই বছর ধরে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হচ্ছে না। নীল দলের একাংশের দাবি, উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের কারণে যথাসময়ে নির্বাচন হয়নি। আরেক অংশের (উপাচার্যপন্থী) অভিযোগ, সবশেষ কমিটির ষড়যন্ত্রের কারণে নির্বাচন হয়নি। তবে দুই পক্ষই চাইছে, দ্রুত নির্বাচন হোক।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নীল দলের দুটি ধারা আছে। এক পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের ‘মূলধারার’ সভাপতি ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী। আরেক পক্ষে নেতৃত্বে দিচ্ছেন পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সবশেষ কমিটির সভাপতি দুলাল চন্দ্র নন্দী এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. আবু তাহের। দুটি পক্ষই বঙ্গবন্ধু পরিষদের ব্যানারে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করে থাকে। এ ছাড়া বিএনপিপন্থী গুটিকয় শিক্ষক সাদা দলের ব্যানারে রাজনীতি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৫৭ জন শিক্ষক আছেন।

কাজী ওমর সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন অংশের শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রতিবছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি অথবা জানুয়ারির প্রথম দিকে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন হয়ে থাকে। তত্কালীন কার্যকর কমিটি ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু পরিষদের ‘মূলধারার’ শিক্ষকেরা ১৫ ডিসেম্বর নির্বাচন করার দাবি জানান। কিন্তু তত্কালীন কমিটি নির্বাচন পেছাতে রাজি হয়নি। তারা ১ ডিসেম্বর নির্বাচন করতে অনড় থাকে। ওই নির্বাচনে নীল দলের একাংশ নাম দিয়ে তত্কালীন শিক্ষক সমিতির একটি পক্ষ ১৫টি পদে ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল কয়েকটি পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করে। কিন্তু ‘মূলধারার’ নীল দলের শিক্ষকেরা নির্বাচনে অংশ নেননি। ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর রাত ১১টা ৮ মিনিটে নির্বাচন কমিশন হঠাৎ নির্বাচন শিক্ষক লাউঞ্জের পরিবর্তে পরিসংখ্যান বিভাগের একটি শ্রেণিকক্ষে স্থানান্তর করে।

এই অংশের শিক্ষকেরা আরও বলেন, ভোটকেন্দ্র স্থানান্তরের বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশন ডিন ও বিভাগীয় প্রধানদের চিঠি দেয়। কিন্তু শিক্ষকদের সেটি জানানো হয়নি। ১ ডিসেম্বর সকালে শিক্ষকেরা প্রশাসনিক ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে ভোট দিতে গিয়ে দেখেন নির্ধারিত স্থানে ভোটকেন্দ্র নেই। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের আপত্তির মুখে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার জি এম মনিরুজ্জামান। এর পর থেকে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে শিক্ষক সমিতির এক বছর মেয়াদি কার্যকর কমিটির কোনো নির্বাচন হয়নি।

জানতে চাইলে নীল দলের একাংশের নেতা প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘তত্কালীন শিক্ষক সমিতি নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছে। শিক্ষক সমিতির নির্বাচন সব সময় শিক্ষক লাউঞ্জে হয়। ওরা তত্কালীন সভাপতি দুলাল চন্দ্র নন্দীর পরিসংখ্যান বিভাগের একটি শ্রেণিকক্ষে ভোটকেন্দ্র নিয়ে যায়। নির্বাচন নিয়ে ওরা ষড়যন্ত্র করে। এরপরও বঙ্গবন্ধু পরিষদ নির্বাচন করার জন্য চিঠি দেয়। নীল দলের নাম ব্যবহার করা ষড়যন্ত্রকারীদের কারণে নির্বাচন হয়নি। আমরা চাই নির্বাচন হোক। শিগগিরই সবাই মিলে একটি নির্বাচন করতে চাই।’

নীল দলের আরেকাংশের নেতা ও শিক্ষক সমিতির সবশেষ কমিটির সভাপতি দুলাল চন্দ্র নন্দী প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের কারণে নির্বাচন হচ্ছে না। ওই সময় নীল দলের একটি অংশ নির্বাচন ভন্ডুল করে দেন। আমরা চাই সমিতির কমিটি নিয়মিত হোক। নির্বাচন নিয়মিত না হওয়ার কারণে শিক্ষকেরা তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরাও চাই নির্বাচন হোক।’

এ প্রসঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের সঙ্গে উপাচার্যের কোনো সম্পর্ক নেই। শিক্ষকদের একটি অংশ তাঁর কাছে বহু আগে এসেছিলেন। তাঁরা নির্বাচন করার দাবি তুলেছিলেন। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, এটা শিক্ষকদের বিষয়। সেখানে তাঁর কিছু করার নেই।