ভৈরবে ‘হাইব্রিড’ ও ‘রিয়েল’ বিএনপি ইস্যুতে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৮

ভৈরবে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশ। আজ শনিবার দুপুরেছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে এক নেতাকে ‘হাইব্রিড’, আরেক নেতাকে ‘রিয়েল’ বিএনপি বলায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। আজ শনিবার দুপুরে ভৈরব পৌর শহরের চন্ডিবের উত্তরপাড়ায় এই ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় কয়েকটি ঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর হয়। পরে পুলিশ ও বিএনপি নেতারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চন্ডিবের উত্তরপাড়া ভৈরব শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে জাতীয় নির্বাচনে ওয়ার্ডের ৮০ শতাংশের ভোট ধানের শীষের ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অনেকে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। অনেকে দলে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। প্রতিকূলতার মধ্যে কিছু মানুষ বিএনপির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন থেকে ওয়ার্ডের অধিকাংশ মানুষ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে শুরু করে। বিষয়টির বিএনপির অনেকে মেনে নিতে পারছে না। যাঁরা আওয়ামী লীগে নাম লিখিয়ে বর্তমানে বিএনপি হয়ে রাজনীতি করতে চান—তাঁদের হাইব্রিড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর দুঃসময়ে যাঁরা বিএনপিতে ছিলেন, তাঁদের এখন রিয়েল বিএনপি হিসেবে ডাকা হয়।

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন কুলিয়ারচর উপজেলা বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতাকে আজ দুপুরে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলম দেখতে যান। নেতার আগমন উপলক্ষে ফুল হাতে অনেকে সকাল থেকে হাসপাতালের ফটকে অবস্থান করছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শরিফুল আলম হাসপাতালে যান। তখন তাঁকে ফুল দেওয়া নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়। নেতা চলে যাওয়ার পর দুপুর ১২টার দিকে কিছু মানুষ হাইব্রিড বলে স্লোগান দেন। আবার কিছু মানুষ রিয়েল বিএনপি বলে স্লোগান দেন।

৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি আকবর মিয়ার ছেলে সফিকুল ইসলাম একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন। সফিকুল যুবদলের রাজনীতি করেন। পক্ষটি মনে করে একই ওয়ার্ডের যুবদলের সভাপতি আক্তার মিয়ার পক্ষ তাঁদের উদ্দেশ্য করে স্লোগানটি দিয়েছেন। এই ধারণা থেকে সফিকের পক্ষ ক্ষুব্ধ হয় এবং পরবর্তী সময়ে দুই পক্ষ লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। সংঘর্ষ থামাতে আসেন উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম। প্রায় এক ঘণ্টা থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে।

আক্তার মিয়া বলেন, ‘প্রথমত, কে বা কারা হাইব্রিড স্লোগান দিয়েছিলেন, আমাদের জানা নেই। তবে সফিকুল ইসলামসহ অনেকে এত দিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘর করেছেন। পটপরিবর্তনের পর তাঁরা এখন নিজেদের খাঁটি বিএনপি দাবি করেন। নেতাদের বড় বড় ফুলের তোড়া দেন। এলাকার লোকজন পক্ষটিকে হাইব্রিড বলে।’

সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আগেও বিএনপি ছিলাম, এখনো আছি। হাইব্রিড বলে ছোট করার সুযোগ নেই। অথচ আক্তারের পক্ষ সুযোগ পেলেই আমাদের ছোট করার চেষ্টা করে।’

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রেজিনা পারভীন বলেন, সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে এখানে পাঁচজন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে দুজনকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহিন মিয়া বলেন, কে হাইব্রিড আর কে রিয়েল বিএনপি এই নিয়ে সংঘর্ষ। তবে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। কোনো পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি।