কড়া রোদ কৃষকের মনে আনল স্বস্তি 

হাওরে বাংলা নতুন বছরের শুরুতেই ধানকাটা শুরু হয়। বৈশাখজুড়ে চলে হাওরে ধান কাটার উৎসব। 

শ্রমে-ঘামে ফলানো ধান এবার গোলায় তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকেরা। ধান কাটার মধ্য দিয়ে শুরু হয় হাওরপাড়ের কিষান-কিষানিদের বৈশাখ। ধান কাটা-মাড়াই করে তা বস্তায় ভরা হচ্ছে। গতকাল সুনামগঞ্জের দেখার হাওরে
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে এখন ‘গা-পোড়া’ রোদ। এই রোদই আশা জাগাচ্ছে কৃষকের মনে। রোদে কষ্টের বদলে একধরনের স্বস্তি আছে কৃষকদের মাঝে। কারণ, হাওরজুড়ে এখন সোনালি ধানের সমারোহ। শ্রমে-ঘামে ফলানো ধান এবার গোলায় তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকেরা। শুরু হচ্ছে বৈশাখী উৎসব। কৃষকদের ভাষায় ‘দিন ভালো’ বা আবহাওয়া ভালো থাকলে  বৈশাখজুড়ে হাওরে এই উৎসব থাকবে। হবিগঞ্জেও শুরু হয়েছে ধান কাটার উৎসব। 

কৃষকেরা বলেন, সুনামগঞ্জে হাওরে বাংলা নতুন বছরের শুরুতেই ধানকাটা শুরু হয়। বৈশাখজুড়ে চলে হাওরে ধান কাটার উৎসব। 

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলার সদর উপজেলার দেখার হাওরে কথা হয় হরিপুর গ্রামের কৃষক জামাল উদ্দিনের (৫০) সঙ্গে। জামাল উদ্দিন এবার চার একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। সেই ধান পেকেছে। দু-এক দিনের মধ্যেই কাটবেন। আগের প্রস্তুতি হিসেবে হাওরে ধান কেটে রাখা, মাড়াই ও শুকানোর স্থান তৈরি করছেন। স্থানীয়ভাবে ওই স্থানকে বলে ‘খলা’। 

জামাল উদ্দিন বলেন, ‘এই ধানের ওপরই আমরার সব। সারা বছরের খাওন, বাচ্ছাইনতের (বাচ্চাদের) লেখাপড়া, বিয়াশাদি সবই ধানের ওপরে। ধান পাইলে খুশি, না পাইলে পুরা বছর কাইন্দা যায়।’ 

ষোলবাগী গ্রামের কৃষক হাফিজুর রহমান (৭০) মাথায় কাটফাটা রোদ নিয়েই হাওরে ধান দেখতে এসেছেন।  তিনি জানান, হাওরে সাত একর জমিতে ধান লাগিয়েছেন। এখনো পুরোপুরি ধান পাকেনি। পরিবারে ৯ জন মানুষ। এই ধানের ওপরই সব নির্ভর করে তাঁর। হাফিজুর বললেন, ‘বাবারে অপেক্ষাত আছি, কোনোদিন ধান কাটতাম। দিনের (আবহাওয়া) ওপরে বিশ্বাস নাই। পানি আইলেই ত সব শেষ। আরও সপ্তাহ লাগব, পুরাপুরি ধান কাটা লাগতে।’

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার মার্চের শেষ এবং এপ্রিলের শুরুতে সুনামগঞ্জে কয়েক দিন বৃষ্টি হয়েছে। এতে কৃষকদের মনে ফসল নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। গত বছর এপ্রিলের শুরুতেই জেলার কয়েকটি হাওরে পাহাড়ি ঢলে ফসলহানি হয়। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, হাওরে ধানকাটা চলছে। মাঠে এখন ৬৯২টি কম্বাইন হারভেস্টার আছে। পাশাপাশি শ্রমিকেরাও ধান কাটছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মে মাসের ৫ তারিখের মধ্যে হাওরে ধান কাটা শেষ হয়ে যায়। 

জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, কৃষকেরা উৎসাহ নিয়েই হাওরে ধান কাটছেন। তাঁরা খুশি। কৃষকের ধান গোলায় তোলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি বাঁধে তাঁদের নজরদারি থাকবে। 

হবিগঞ্জে জেলা প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে বানিয়াচং উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের হাওরে ধান কাটার উৎসবের আয়োজন করে। গতকাল বেলা ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করে জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান। এ সময় কৃষক সমাবেশ ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা হয়। বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক নুরে আলম সিদ্দিকী ও বানিয়াচং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক প্রমুখ। 

জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও উন্নত জাতের ধান চাষে কৃষকদের আরও এগিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া দাদন ব্যবসায়ীদের হাত থেকে মুক্তি পেতে সহজ শর্তে ব্যাংক থেকে কৃষি ঋণ নিতে তিনি ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করেন।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১ লাখ ২২ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে এ বছর বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এবার ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৩৯০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।