ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় সড়কবাতি জ্বলে না, চলাচলে ভোগান্তি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা ও সওজের সমন্বয়হীনতায় শহরের মৌড়াইল রেলওয়ের ওভারপাসসহ কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ভাদুঘর থেকে পুনিয়াউট পর্যন্ত সড়কে রাতে বাতি জ্বলে না। চলাফেরা করতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। গত বৃহস্পতিবার রাতেছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে শহরের মৌড়াইল রেলওয়ে ওভারপাসসহ কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ভাদুঘর থেকে পুনিয়াউট পর্যন্ত রাতে কোনো সড়কবাতি জ্বলে না। এর ফলে বিভিন্ন যানবাহনসহ পথচারীদের সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত অন্ধকারের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হয়।

সওজের ভাষ্য, সড়কবাতিগুলোর বিদ্যুৎ বিল তাদের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব নয়। আর পৌরসভার ভাষ্য, বাতিগুলো রক্ষণাবেক্ষণে ‘বিম লিফটার’ নামক যন্ত্রের দরকার, যা তাদের কাছে নেই। বিম লিফটার কেনা পর্যন্ত সওজের কাছ থেকে বাতিগুলো বুঝে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে গত বুধবার সওজের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়েছেন পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির।

চিঠি সূত্রে জানা গেছে, জেলা শহরের অংশ মৌড়াইল রেলওয়ে ওভারপাস সওজের আওতাধীন। ওই ওভারপাসের এবং কুমিল্লা-সরাইল সড়কের ভাদুঘর হুজুরবাড়ি থেকে পুনিয়াউট মোড় পর্যন্ত সড়ক বাতিগুলো ৩০ ফুট উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে। এই উচ্চতায় সড়কবাতি রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য বিম লিফটার যন্ত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় নেই। প্রচলিত মই ব্যবহার করে উল্লিখিত বাতিগুলো ব্যবস্থাপনা করা দুরূহ কাজ। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল কুদদূস প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কবাতি মেরামত করার মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দরপত্রের মাধ্যমে এটি কেনা হবে। বাতি কেন চলছে না, বিষয়টি দেখার জন্য আমরা কাজ করছি। সংযোগ ছিঁড়ে গেছে, নাকি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, তা যাচাই করে দ্রুতই বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা করব। আমাদের কাছে যে মই, আছে তা দিয়ে ১৫ ফুটের বেশি ওঠা যায় না।’

সওজ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মৌড়াইল রেলওয়ে ওভারপাসের সড়কবাতিগুলো ব্যবহারে মাসিক বিদ্যুৎ বিল গড়ে ৩০ হাজার টাকা এবং ভাদুঘর হুজুরবাড়ি থেকে পুনিয়াউক পর্যন্ত সড়কবাতিগুলোর মাসিক বিদ্যুত বিল ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আসে।

এই বিল সওজের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বিম লিফটার যন্ত্র কেনা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ওই যন্ত্র কিনতে হয়তো মাস দেড়েক সময় লাগবে। যন্ত্র কেনার পর দুটি সড়কের বাতি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সড়কের বাতিগুলো বুঝে নেওয়ার কথা ছিল পৌরসভার।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের নভেম্বরে উদ্বোধনের পর থেকে ৭৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের মৌড়াইল রেলওয়ে ওভারপাস সড়কে থাকা ৬০টি বাতির বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছে সওজ। কয়েক মাস আগেও রাতের বেলায় শহরের মৌড়াইল রেলওয়ে ওভারপাসের ৬০টির মধ্যে ১৩টি বাতি জ্বলত। ওই ওভারপাস সড়কে জেলার গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তর রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাতে রেলওয়ের ওভারপাস ও ভাদুঘর হুজুরবাড়ি থেকে পুনিয়াউট পর্যন্ত সড়কে অন্ধকার থাকায় যেকোনো সময় অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ফ্লাইওভারে ছিনতাইকারীদের উৎপাত বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।