পঞ্চগড়ে চিকিৎসক পদায়নসহ ৯ দাবিতে অনশন, পানি পান করালেন ডিসি
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালসহ অপর চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সৃষ্ট পদ অনুযায়ী চিকিৎসক পদায়ন, সদর হাসপাতালের নবনির্মিত ভবন চালু, হাসপাতালে খাবারের মানোন্নয়নসহ ৯ দফা দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন জেলার সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী ফোরামের সদস্যরা। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ অনশন কর্মসূচি শুরু হয়। এতে জেলার সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী ফোরামের প্রায় অর্ধশত সদস্য অংশ নেন।
দুপুর সাড়ে ১২টার পর পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সাবেত আলী ও সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান সেখানে উপস্থিত হয়ে অনশনকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। এ সময় তাঁরা তাঁদের দাবি পূরণের বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজ করছেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দেন। জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে অনশনকারীরা অনশন ভাঙতে রাজি হলে জেলা প্রশাসক পানি পান করিয়ে তাঁদের অনশন ভাঙান।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ৩৭ চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ১১ জন। এ ছাড়া জেলার অন্য ৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ২৬ জন। এতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার প্রায় ১২ লাখ মানুষ। হৃদ্রোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণসহ নানা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাব্যবস্থা না থাকায় হাসপাতালে যাওয়ামাত্রই রংপুর কিংবা দিনাজপুরে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে অনেক রোগী পথেই মারা যাচ্ছেন।
আন্দোলনকারীরা জানান, অর্থের অভাবে অনেক রোগী বাইরে যেতে না পারায় ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছেন। অথচ জেলা শহরের ১০০ শয্যার হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের জন্য একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হলেও সেটি চালু করা হচ্ছে না। পঞ্চগড়ের মানুষের প্রতি এমন বৈষম্য দূরীকরণ এবং চিকিৎসাসেবার মতো মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী ফোরামের সদস্যরা অনশনে বসতে বাধ্য হয়েছেন।
এদিকে অনশন ভাঙাতে এসে পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পঞ্চগড়ে চিকিৎসকসংকট দীর্ঘদিনের সমস্যা। এটি সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাসহ নানা কার্যক্রম আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়া নতুন যে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, সেটি হস্তান্তর ছাড়া এর ভেতরে চিকিৎসা সরঞ্জাম, জনবল ও আসবাব—কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি। এসব সমস্যা সমাধানে আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছি।’
অনশন ভাঙানোর আগে জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী বলেন, ‘পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জনসহ আমরা পঞ্চগড়ের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের জন্য এবং হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক পদায়নের জন্য ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করেছি। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও আমি পত্র দিয়েছি। আজকে পঞ্চগড়ের তরুণ প্রজন্মের যেসব দাবিতে অনশন, সেটিও আমরা যথাযথ নিয়মে সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। এ সময় তিনি অনশনকারীদের অনশন ভাঙার আহ্বান জানান।’
অনশন ভেঙে পঞ্চগড়ের সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী ফোরামের সমন্বয়ক আহসান হাবিব সরকার বলেন, ‘পঞ্চগড়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকসংকট দূর করাসহ আমাদের ৯ দফা দাবির বিষয়ে জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে আমরা অনশন ভেঙেছি। তবে আমরা ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছি। এই ১৫ দিনের মধ্যে পঞ্চগড়ের মানুষের চিকিৎসাসেবা–সংক্রান্ত এসব সমস্যার সমাধান না হলে আমাদের আন্দোলন আবারও চলবে।’