নিমিষেই অন্ধকার হয়ে গেল ‘শাহ বাড়ি’

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত স্বামী-স্ত্রীর স্বজনদের আহাজারি। সদর উপজেলার বিষয়খালী গ্রামে মঙ্গলবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

ঝিনাইদহের ছাবদার আলী শাহের তিন মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী দুজনই বসবাস করতেন। মেজ মেয়ের শরীরটা খারাপ হওয়ায় তাঁর চিকিৎসা করাতে যশোর নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে দুর্ঘটনায় ছাবদার আলী ও তাঁর স্ত্রী মারা যান। প্রতিবেশীরা বলছেন, ছাবদার আলীর ঘরে এখন বসবাস করার আর কেউ রইল না। বাড়িতে এখন থেকে আর বাতিও জ্বলবে না।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মোবারকগঞ্জ চিনিকলের সামনে বলিদাপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত দুজন হলেন সদর উপজেলার বিষয়খালী গ্রামের ছাবদার আলী (৫০) ও তাঁর স্ত্রী পারভীনা বেগম (৪২)। এ ঘটনায় তাঁদের মেয়ে সাথী খাতুন (২২), সাথীর ছেলে আরাফাত হোসেন (৫) ও ভ্যানের চালক আবদুল করিমকে আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে।

আজ ছাবদার আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ভিড় করেছেন প্রতিবেশীরা। বেলা ১১টার দিকে লাশ দুটি বাড়িতে আসা মাত্রই চারদিকে কান্নার রোল পড়ে যায়। প্রতিবেশীরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁরা বলেন, ছাবদার আলীর তিন মেয়ে। শারমিন খাতুন (২৫), সাথী খাতুন (২২) আর ইতি খাতুন (২০)। তিনজন শ্বশুরবাড়িতেই থাকেন। সাথী শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ হয়ে বাবার বাড়িতেই ছিলেন।

আরও পড়ুন

আজ সাথীকে নিয়ে যশোরে ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলেন ছাবদার ও পারভীনা। সঙ্গে ছিল সাথীর একমাত্র ছেলে আরাফাত হোসেন (৫)। ছাবদার আলী তাঁর ভ্যানটি চালানোর দায়িত্ব দেন আবদুল করিমকে। ভোরে বিষয়খালী গ্রাম থেকে রওনা দেন যশোরের উদ্দেশ্যে। পথে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মোবারকগঞ্জ চিনিকলের সামনে বলিদাপাড়া এলাকায় একটি পিকআপ তাঁদের ভ্যানটি ধাক্কা দেয়। মুহূর্তের মধ্যে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী মারা যান। বাকি তিনজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

স্থানীয় লোকজন বলেন, ছাবদার আলী দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় খুবই কষ্ট করে সংসার চালাতেন। নিজের একটি ইঞ্জিনচালিত ভ্যান ছিল। এই ভ্যানে করে তিনি গ্রামে গ্রামে তেল বিক্রি করতেন। প্রতিবেশী বাবলুর রহমান জানান, ছাবদার আলী একজন পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন। একে একে তিন মেয়ে বড় করেছেন, তাদের বিয়েও দিয়েছেন। তেলের ব্যবসা করে যা আয় করতেন, তা দিয়েই তাঁর সংসার চলত। এই ভিটা বাড়িই ছিল তাঁর একমাত্র সম্বল। এখন ঘরগুলো ফাঁকা হয়ে গেল।

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহিম মোল্লা জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই হস্তান্তর করার আবেদন জানানো হয়। তাঁরা লাশ হস্তান্তর করেছেন। দাফনের প্রক্রিয়া চলছে।