হাওরে এবার নির্বিঘ্নে ধান উঠেছে, বিশেষ প্রার্থনার সঙ্গে থাকছে আনন্দ আয়োজন

বোরো ধান তোলার কাজ করছেন কৃষক পরিবারের লোকজন। গত সোমবার জেলার দেখার হাওরেছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে এবারের বোরো মৌসুমে অতি বৃষ্টি, ঝড়, পাহাড়ি ঢল বা অকাল বন্যা ছিল না। আর আবহাওয়া পরিস্থিতিও ছিল অনুকূলে। ফলে ধান কাটা, মাড়াই ও গোলায় তোলার কাজগুলো নির্বিঘ্নে শেষ করতে পেরেছেন স্থানীয় কৃষকেরা। শ্রমে-ঘামে ফলানো সোনার ধান পেয়ে তাঁরা বেশ খুশি।

এ উপলক্ষে আজ শুক্রবার জেলার মসজিদ, মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ প্রার্থনা আয়োজনের নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি আগামী মঙ্গলবার তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরে কৃষকদের নিয়ে আনন্দ আয়োজন করা হবে।

আরও পড়ুন

সুনামগঞ্জের হাওরে এবার ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন বোরো ধানের উৎপাদন হয়েছে। সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পাল জানান, প্রকৃতি যেন এবার হাওরের কৃষকের প্রতি বেশ সদয় ছিল। তাই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া জানাতে জেলার সব মসজিদে আজ জুমার নামাজের পর বিশেষ মোনাজাতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে অন্য ধর্মের প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুবিধাজনক সময়ে প্রার্থনার আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জের মানুষ হাওরের বোরো ধানের ওপর নির্ভরশীল জানিয়ে জেলার সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ও হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ তদারকে গঠিত জেলা কমিটির সদস্য কানিজ সুলতানা বলেন, এ ধানের সঙ্গে কৃষক পরিবারের পুরো এক বছরের খাবার, সন্তানের লেখাপড়া, বিয়েশাদিসহ যাবতীয় ব্যয় জড়িত। তাই ধান গোলায় উঠলে কৃষক পরিবারে পুরো বছর আনন্দ থাকে। কোনো কারণে ধান না পেলে তাঁদের কষ্টের সীমা থাকে না। এবার কৃষকেরা ধান তুলত পেরে বেশ আনন্দিত।

বোরো ধান শুকানোর পর বাতাসে ঝেড়ে পরিষ্কার করছেন দুই নারী।
ছবি: প্রথম আলো

প্রার্থনা অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া জানান, সৃষ্টিকর্তা সদয় ও সহায় ছিলেন বলেই এবার সুনামগঞ্জের হাওরে কৃষকদের ঘরে ঘরে ফসল তোলার আনন্দ। সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া জানাতেই প্রার্থনার আয়োজন। পাশাপাশি আগামী মঙ্গলবার জেলার তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরে কৃষকদের নিয়ে আনন্দ আয়োজন করা হবে। সেখানে সবাইকে মিষ্টি খাওয়ানো হবে। এখন কৃষকেরা নির্বিঘ্নে ফসল গোলায় তুলতে পেরে খুবই খুশি। তাঁদের মুখে এই হাসিই দেখতে চান।

জেলার কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, সুনামগঞ্জে এবার ১৩৭টি ছোট-বড় হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়। গত ১০ এপ্রিল কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সুনামগঞ্জে গিয়ে হাওরে ধান কাটা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর সপ্তাহখানেক পর হাওরে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়। মাঝে ১৫-২১ এপ্রিল ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় কৃষকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কিন্তু শেষমেশ ভারী বৃষ্টি হয়নি। উজানের ঢলও নামেনি।

হাওরের জমিকে দুটি ভাগ বিভক্ত করেছে কৃষি বিভাগ। ‘হাওর’ (হাওরের নিচু এলাকা) এবং ‘নন–হাওর’ (হাওরের উঁচু এলাকা)। এবার হাওরে ১ লাখ ৬৫ হাজার এবং নন–হাওরে ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়। হাওরে ধান কাটা শেষ হয় ৩০ এপ্রিল ও নন–হাওরে ৫ মে। যদিও উঁচু জমিতে আরও কিছু ধান থাকে যেগুলো ২০ মে পর্যন্ত কৃষকেরা কাটেন। এগুলো আবাদও হয় দেরিতে।

সুনামগঞ্জে অকাল বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের কবল থেকে হাওরের বোরো ধান রক্ষায় প্রতিবছর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করে। এবার ৫০টি হাওরে ৬৮৭টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৫৯৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার ও নির্মাণ করা হয়েছে। এতে প্রাক্কলন ব্যয় ছিল ১২৮ কোটি টাকা।