জুলাই আন্দোলনে গুলিতে বোনের, এবার বিমান বিধ্বস্তে সহপাঠীদের মৃত্যু দেখল তাসপিয়া

গত বছরের ১৯ জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় গুলিতে নিহত ছোট বোন নাঈমা সুলতানার সঙ্গে বড় বোন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী তাসপিয়া সুলতানা (বাঁয়ে)
ছবি: পরিবারের সৌজন্যে

গত বছরের ১৯ জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী তাসপিয়া সুলতানার চোখের সামনে বাসায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় তার ছোট বোন নাঈমা সুলতানা। তখন সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এরপর গত সোমবার দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে তার সামনে আছড়ে পড়ে প্রশিক্ষণ বিমান। এতে হতাহত হন অনেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক। তার চোখের সামনে মারা যান অনেকে।

এই দৃশ্য দেখে ঘটনাস্থলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে তাসপিয়া। ঢাকার উত্তরার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর বাসায় আনা হয় তাকে। কিন্তু যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ও চোখের সামনে সহপাঠীসহ অনেকের মৃত্যুর ঘটনায় মানসিকভাবে একদম ভেঙে পড়েছে সে। এখনো ট্রমা কাটেনি তার। আজ বুধবার সকালে তাসপিয়ার মা আইনুন নাহারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে এসব জানা যায়।

তাসপিয়া সুলতানার বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার আমুয়াকান্দা গ্রামে। সে ওই গ্রামের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক গোলাম মোস্তফার বড় মেয়ে। সে ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থী। ঢাকার উত্তরা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় মা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে থেকে কলেজে লেখাপড়া করছে সে। তার বাবা মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর এলাকায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত।

আরও পড়ুন

তাসপিয়া সুলতানার মা আইনুন নাহার মুঠোফোনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, গত বছরের ১৯ জুলাই গণ–অভ্যুত্থান চলাকালে ঢাকার উত্তরার ভাড়া বাসার বারান্দায় গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় তাঁর ছোট মেয়ে নাঈমা। সেখানে দাঁড়ানো ছিল বড় মেয়ে তাসপিয়া। বোনের মৃত্যু দেখার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সে। তারপর সে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিল। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে মেয়েকে চিকিৎসা করালেও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি।

আইনুন নাহার আরও বলেন, ছোট বোনকে হারানোর শোক এখনো কাটেনি, এর মধ্যে তাসপিয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা ঘটল। ক্লাস শেষে বাসায় রওনা দেওয়ার মুহূর্তে তার কাছাকাছি এলাকায় বিকট শব্দে আছড়ে পড়ে যুদ্ধবিমান। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে আগুন। চোখের সামনে ধ্বংসস্তূপ ও মৃত্যু দেখে আতঙ্কিত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে। পরে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর ওই দিন সন্ধ্যায় তাকে বাসায় নিয়ে যান তাঁরা। ঘটনার পর থেকে কারও সঙ্গে কথা বলছে না সে। সারাক্ষণ কান্নাকাটি করে। কিছু খেতে চায় না।

আরও পড়ুন

তাসপিয়া সুলতানার বাবা গোলাম মোস্তফা বলেন, মেয়েকে তাঁরা আবার মনোরোগ চিকিৎসক দেখাবেন। যে করেই হোক, তাকে সুস্থ করে তুলতে হবে।