সিলেটে পুলিশের হেফাজতে রায়হান হত্যা মামলায় জেরা সাক্ষ্য দিলেন পুলিশ কর্মকর্তা
সিলেটে পুলিশের হেফাজতে রায়হান আহমদ (৩৪) হত্যা মামলায় জেরা সাক্ষ্য দিয়েছেন মহানগর পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহরিয়ার আল মামুন। মামলার আসামি সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদের (৩২) পক্ষের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর জেরা সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক এ কিউ এম নাছির উদদীনের আদালতে সাক্ষ্য দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। শাহরিয়ার আল মামুন বর্তমানে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার পদে কর্মরত। মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নওশাদ আহমদ চৌধুরী বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন অভিযুক্ত কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদ। কিন্তু উচ্চ আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করেন এবং সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। আজ উচ্চ আদালতের সেই নির্দেশ গ্রহণ করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক।
সূত্র জানায়, মামলার ৬৯ জন সাক্ষীর মধ্যে রায়হানের মা সালমা বেগম, স্ত্রী তাহমিনা আক্তার সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ সাক্ষ্য দেন সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-৩-এর বিচারক শারমিন খানম। আজ দুপুরে আসামিপক্ষের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কর্মকর্তা শাহরিয়ার আল মামুনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। পরবর্তী তারিখে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা পুলিশ কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য গ্রহণের কথা আছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী এম এ ফজল চৌধুরী বলেন, পুলিশ শাহরিয়ার আল মামুন আগে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তখন অভিযুক্ত হারুন অর রশিদের পক্ষের আইনজীবী তাঁকে জেরা করেননি। পরে তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ ওই পুলিশ কর্মকর্তার জেরা সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। তিনি বলেন, মামলার ৬৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এর মধ্যে দুজন সাক্ষী মারা গেছেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ পর্যায়ে আছে। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামি পরীক্ষা ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হবে। দ্রুত মামলার রায় হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলায় অভিযুক্ত ছয়জনের মধ্যে উচ্চ আদালতের নির্দেশে সাময়িক বরখাস্ত এসআই মো. হাসান উদ্দিন (৩২) জামিনে আছেন। এ ছাড়া অভিযুক্ত আবদুল্লাহ আল নোমান মামলার শুরু থেকে পলাতক। বাকি চার আসামি কারাগারে। পলাতক আসামি আবদুল্লাহ আল নোমানের বিষয়ে আদালতের নির্দেশে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও মালামাল ক্রোকের আদেশ তামিল করেছে পুলিশ। আজ জেরা সাক্ষ্য গ্রহণকালে কারাগারে থাকা চার আসামি এবং জামিনে থাকা হাসান উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। এদিকে মামলার প্রধান অভিযুক্ত সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া গত ১০ সেপ্টেম্বর ব্যক্তিগত অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আদালতে হাজিরা থেকে অব্যাহতির পিটিশন দাখিল করেন।
আজ দুপুরে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন নিহত রায়হানের মা সালমা বেগম। তিনি বলেন, ছেলেকে হারিয়ে এখনো শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে আছে। এতে ন্যায়বিচার পাবেন বলে তাঁরা আশাবাদী।
২০২০ সালের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে রায়হান আহমদকে নির্যাতন করা হয়। ১১ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রধান অভিযুক্ত আকবরকে ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০২১ সালের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় পিবিআই। অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে (৩২) প্রধান অভিযুক্ত করা হয়। অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক আশেক এলাহী (৪৩), কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদ (৩২), টিটু চন্দ্র দাস (৩৮), ফাঁড়ির টুআইসি পদে থাকা সাময়িক বরখাস্ত এসআই মো. হাসান উদ্দিন (৩২) ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান (৩২)।