‘কইছিল ফোন দিব, আর দেই নাই’

নিহত সাগরের মা আলেয়া বেগমের আহাজারি। আজ বৃহস্পতিবার গাজীপুরের এনায়েতপুরে
ছবি: প্রথম আলো

‘পুলাডা পরশু দিন (গত মঙ্গলবার) আমার লগে দেহা করছিল। দেহা কইরা কইছিল, “মা, আমারে দুই-তিন শ ট্যাহা দেও, আমি ঢাহা কাম করবার যামু।” আমি কইছিলাম, আমার কাছে তো ট্যাহা নাই বাবা। ও কইছে, “দেহ, কেওর (কারও) কাছ থাইক্যা হাওলাদ কইরা দিতে পারো নাকি। যেমনেই হোক, আমারে এক শ ট্যাহা দেও মা, আমি কামে যামু।” পরে হাওলাদ কইরা এক শ ট্যাহা দিলে বেলা ৩টা-৪টার দিকে চইল্যা যায়। যাওনের সময় পুলাই আমারে কইছিল, “মা, আমি গাড়িতে উইঠ্যা ফোন দিমুনি।” আমারে আর ফোন দেই নাই।’

রাঙামাটির বাঘাইছড়ির দাড়িপাড়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মো. সাগরের (২১) মা আলেয়া বেগম (৬০) আজ বৃহস্পতিবার কাঁদতে কাঁদতে এসব কথা বলেন। সাগর গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুর থানার পশ্চিম এনায়েতপুর এলাকার হাসেম সিকদারের ছেলে।

নিহত সাগরের স্বজনেরা বলেন, সাগররা তিন ভাই। বড় দুই ভাই মো. আলম ও মো. আকাশ কাজকর্ম করলেও সাগর কিছুই করতেন না। এসব নিয়ে বড় ভাইদের সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এ নিয়ে দুই মাস আগেও সাগরের সঙ্গে পরিবারের অন্যদের ঝগড়া হয়। বড় দুই ভাই তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এরপর দুই মাস ধরে সাগর এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করতেন, বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে ঘুমাতেন। হঠাৎ তিনি কারও কাছ থেকে কাজের খোঁজ পেয়ে গত মঙ্গলবার বাড়ি থেকে তাঁর মায়ের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে যান। এরপর বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা খবর পান, রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন সাগর। খবর পেয়ে আজ সকালে বড় ভাই আকাশ তাঁর লাশ আনতে রাঙামাটির উদ্দেশে রওনা দেন।

আজ বিকেলে নিহত সাগরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে আশপাশের শত শত মানুষ ভিড় করেছেন। মা আলেয়া বেগম নিজের শোবার ঘরের খাটে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন আর বিলাপ করছেন। ছেলের সঙ্গে শেষ কিছু কথা হয়েছিল, সেই কথাগুলো বিলাপ করে বলছেন।

নিহত সাগরের বড় ভাই মো. আলম জানান, বাড়িতে রাগারাগি করে দুই মাস ধরে বাড়িতে আসতেন না তিনি। তবে মাঝমধ্যে বাড়িতে এসে খাওয়াদাওয়া করতেন আবার চলে যেতেন। প্রতিবেশী একজনের মাধ্যমে কাজের খোঁজে গিয়ে আর ফিরে আসেননি।

বাঘাইছড়ির দাড়িপাড়া এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মিনিট্রাক খাদে পড়ে ৯ শ্রমিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও ৬ জন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাঘাইছড়ি উপজেলার শিজকছড়া-উদয়পুর সড়কের সাজেক ইউনিয়নে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উদয়পুর সীমান্ত সড়কের কাজ করার জন্য খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে মিনিট্রাকে করে ১৫ শ্রমিক যাচ্ছিলেন। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ট্রাকটি দাড়িপাড়া এলাকার ৯০ ডিগ্রি পাহাড়ে পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গভীর খাদে পড়ে যায়। এ সময় ট্রাক থেকে ছিটকে পড়ে ও ট্রাকের চাপায় ঘটনাস্থলেই পাঁচ শ্রমিক নিহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান আরও চারজন। এ ঘটনায় আরও ছয়জন আহত হয়েছেন।