রাস্তা কেটে পাড় বাঁধাই

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের আওতায় খাল খননের কাজ চলছে।

গাজীপুরের কাপাসিয়ার বিকারটেক গ্রামে দরদিয়া খালের দুই পাশে মানুষের চলাচলের রাস্তা কেটে পাড় বাঁধাইয়ের কাজ করছেন ঠিকাদারছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের বিকারটেক গ্রামে দরদিয়া খালের দুই পাশে মানুষের চলাচলের রাস্তা কেটে পাড় বাঁধাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। খননকাজও যথাযথ হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাঁদের।

গতকাল শনিবার ওই এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, দরদিয়া খালের ওপর পুরোনো একটি স্লুইসগেট থেকে পূর্ব দিকে কিছু জায়গাজুড়ে খাল খননকাজ চলছে। খালের দক্ষিণ পাড়ের মানুষের চলাচলের রাস্তাটি ইতিমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। উত্তর পাড়ের রাস্তাটিও কাটা হয়েছে। রাস্তা কেটে এসব মাটি দিয়ে খালের পাড় বাঁধাই করা হয়েছে। দক্ষিণ পাড়ে খাল খনন করে পাওয়া মাটি স্থানীয় কৃষকের ফসলি জমিতে ফেলা হয়েছে। চলাচলের রাস্তা কেটে ফেলায় দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় লোকজন। তাঁরা জানান, কিছু কিছু জায়গায় খাল খনন না করে এক্সকাভেটর মেশিন দিয়ে শুধু পাড় বাঁধাই করেই কাজ শেষ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের আওতায় খাল খননের কাজ চলছে। বিকারটেক গ্রামে দরদিয়া খালে ১ হাজার ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যজুড়ে খননের কাজ করছে মেসার্স বি ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. বাদল। কার্যাদেশ অনুযায়ী খালের বর্তমান গভীরতা থেকে গড়ে পাঁচ ফুট গভীর করে খাল খনন করার কথা। একই সঙ্গে চলবে পাড় বাঁধাইয়ের কাজ।

আমাকে স্থানীয় এলাকাবাসী রাস্তা কাটার বিষয়টি জানিয়েছিল। আমি বিএডিসির প্রকৌশলীকে বিষয়টি বলেছি। তাঁরা বলেছেন রাস্তা ঠিক করে দেবেন।
এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান, ইউএনও, কাপাসিয়া

বিকারটেক গ্রামের বাসিন্দা মো. কাজল মিয়া খালের পাড়ে দাঁড়িয়ে প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামের একটি অংশের হাজারের বেশি মানুষের চলাচলের রাস্তা কেটে খালের পাড় বাঁধাই করছে। এতে মানুষের চলাচলে মারাত্মক ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া খাল খনন যথাযথভাবে করা হচ্ছে না।

বিকারটেক গ্রামের বাসিন্দা মোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, খালের কিছু কিছু জায়গায় শুধু আঁচড় দিয়েই কাজ শেষ করছে, খনন করছে না।

বিকারটেক গ্রামের মো. মাইনুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাল খননের নামে বরং খাল ভরাট করা হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় রাস্তা কেটে মাটি এনে প্রশস্ত খালের পাড়ে দিয়ে এর প্রশস্ততা কমানো হচ্ছে। এ ছাড়া খাল খননে মাটি আমাদের ধানখেতের ওপর ফেলে ফসল নষ্ট করা হচ্ছে।’

খালের খননকাজে নিয়োজিত মেসার্স বি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. বাদল বলেন, ‘আমরা যথাযথভাবেই খাল খনন করছি। কিছু জায়গায় আগেই গভীর থাকার ফলে সেখানে হয়তো কিছুটা কম মাটি কাটতে হচ্ছে। কিন্তু খাল খননে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না।’

খালের দুই পাড়ে মানুষের চলাচলের রাস্তা কেটে মাটি দিয়ে পাড় বাঁধাইয়ের অভিযোগ সম্পর্কে মো. বাদল বলেন, ‘এক্সকাভেটর মেশিন খালের তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য রাস্তা কাটতে হয়েছে। খালের গভীরতা বেশি হওয়ায় পাড়ের রাস্তা কেটে নিচু করে আপাতত খননকাজ করা হচ্ছে। কেটে ফেলা রাস্তাগুলো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’ এ ছাড়া খালের প্রশস্ততা কমানোর অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রশস্ততা কমানো হচ্ছে না। আমরা নিয়ম অনুযায়ী পাড় বাঁধাই করছি।’

কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে স্থানীয় এলাকাবাসী রাস্তা কাটার বিষয়টি জানিয়েছিল। আমি বিএডিসির (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন) প্রকৌশলীকে বিষয়টি বলেছি। তাঁরা বলেছেন রাস্তা ঠিক করে দেবেন। এ বিষয়ে ওনাদের সঙ্গে কথা বলেন।’

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (ক্ষুদ্র সেচ) গাজীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমি আপনার কাছ থেকে বিষয়টি শুনলাম। খোঁজ নিয়ে দেখব। তাঁরা যদি যথাযথভাবে খননকাজ না করেন, তাহলে বিল পাবেন না। আমি এ বিষয়ে খোঁজ নেব।’