সেলুন ব্যবসায়ী যিশু এখন সবজি বিক্রেতা

সেলুনের ব্যবসা ছেড়ে যিশু সবজির ব্যবসায় থিতু হয়েছেন
ছবি: প্রথম আলো

সিলেট শহরের সুবিদবাজার এলাকায় যিশু চন্দের (৩২) নিজের একটা সেলুন ছিল। যিশুর অধীন কয়েকজন নরসুন্দর কাজও করতেন। আয়-রোজগারও মন্দ ছিল না। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে সবকিছু বদলে যায়। লকডাউনের সময় দিনের পর দিন বন্ধ ছিল যিশুর সেলুন। ফলে জমতে থাকে দোকানভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল। আয়হীন হয়ে বিপাকে পড়া যিশু তখন বাধ্য হয়েই সেলুনের ব্যবসা বন্ধ করে দেন।

ওই ব্যবসা ছেড়ে যিশু পেটের দায়ে ঠেলাগাড়িতে ফেরি করে সবজির ব্যবসা শুরু করেন। এখন এই পেশাতেই থিতু হয়েছেন তিনি। তবে সবজি ব্যবসাতেও এখন দুর্দিন চলছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ বাজার খরচ কমিয়ে সমন্বয়ের চেষ্টা করছেন। এতে যিশুর আয়-রোজগার কমে গেছে।

যিশুর বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ধোপারহাট গ্রামে। ১৫ বছর আগে তিনি কাজের খোঁজে সিলেটে এসেছিলেন। এখন সিলেট নগরের পনিটুলা এলাকায় স্ত্রী ও আট বছরের মেয়েকে নিয়ে ভাড়া থাকেন যিশু। সিলেটে আসার পর কয়েকটি দোকানে অন্যের অধীন নরসুন্দরের কাজ করেন। টাকাপয়সা জমিয়ে একসময় নিজেই একটা সেলুন চালু করেন। এরপর সবকিছু ভালোই চলছিল। তবে করোনায় ওই ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে পুঁজি জমলে আবার সেলুন ব্যবসায় ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন যিশু।

যিশু বলেন, একটা সেলুন নতুনভাবে চালু করতে হলে অন্তত ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা প্রয়োজন। পুঁজির অভাবে তিনি পুরোনো ব্যবসায় ফিরে যেতে পারছেন না। কিছু টাকাপয়সা জমলে আবার সেলুনের ব্যবসা শুরু করতে চান।

গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরের আখালিয়া এলাকায় ফুটপাতে সবজি বিক্রি করছিলেন যিশু। ঠেলাগাড়িতে পেঁপে, আলু, ঢ্যাঁড়স, কাঁকরোল, শসা, ঝিঙে, লাউ, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা, লেবু, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজির পসরা বসিয়েছেন। বাড়িফিরতি লোকজন দরদাম করে যিশুর কাছ থেকে সবজি কিনছিলেন।

প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার সবজি কেনেন যিশু। এর বিপরীতে তাঁর ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ হয়। গড়ে মাসে তাঁর আয় হয় ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা। সীমিত এ আয়ের মধ্যেই তাঁকে সংসার চালাতে হয়।

তবে সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। ফলে চলতি মাসে খরচ অনেকটাই বেড়ে গেছে বলে জানালেন যিশু। তিনি বলেন, এখন যত আয় তত ব্যয়। আগে কিছু টাকা জমাতে পারলেও এখন সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। টাকা জমানো তো দূরের কথা, ঠিকমতো দুবেলা ভাত খেয়ে চলাই দায় হয়ে পড়েছে। লোকজন এখন প্রয়োজনের চেয়েও কম সবজি কেনেন। তাই আয় আরও সীমিত।

কথায় কথায় যিশু তাঁর মাসিক খরচের একটা আনুমানিক হিসাব দেন। তিনি জানান, প্রতি মাসে তাঁর ঘরভাড়া দিতে হয় চার হাজার টাকা। বিদ্যুৎ বিল বাবদ খরচ হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। মেয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। তার বিদ্যালয়ে যাতায়াতসহ পড়াশোনা বাবদ গড়ে মাসে দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা ব্যয় হয়। খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা বাবদ অন্তত তাঁর পরিবারে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়। মাস শেষে তাঁকে টানাটানির মধ্যে থাকতে হয়। এ অবস্থায় পরিচিত লোকদের কাছ থেকে ধার করতে হচ্ছে অনেক সময়।

যিশু বলেন, ‘মাইনষে এখন হিসাব কইরা কিনে। আগের মতো রুজি নাই। সবজি এখন কম চলে। পুঞ্জির অভাবে সেলুন ব্যবসাও আর শুরু করতাম পারতাছি না। এখন যে কঠিন পরিস্থিতি চলতাছে, পুঞ্জি জমানিও কঠিন। তাই সবজি ব্যবসায়ই আমার এখন সব। তবে এই ব্যবসা কইরাও এখন ভালোমতো চলা কঠিন। আয় আর ব্যয় সমান–সমান। গত তিন বছরে সবজি ব্যবসা কইরা তিন টাকাও জমাইতে পারছি না।’