পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে: জেএসএস
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) বলেছে, বিদায়ী ২০২৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে ২৪০টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এতে দেড় হাজারের বেশি পাহাড়ি মানুষ নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দলটি ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে’ এ তথ্য উল্লেখ করেছে। আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে এই মানবাধিকার প্রতিবেদন পাঠানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৭ সালে সরকার ও জেএসএসের মধ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক ও উদ্বেগজনক হয়ে পড়েছে। দমন–পীড়ন, ধরপাকড়, জেল–জুলুম, হত্যা, গুম, মিথ্যা মামলায় জড়ানো, ভূমি বেদখল, সরকারি মদদে পুনর্বাসিত বাঙালিদের গুচ্ছগ্রাম সম্প্রসারণ, অনুপ্রবেশ ও নারীর ওপর সহিংসতা ঘটছে। এ ধরনের মানবতাবিরোধী ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৬ বছর চলে গেলেও এ চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামী লীগ সরকার গত ২০০৯ সাল থেকে ১৫ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও বর্তমান সরকার পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি। চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ তো গ্রহণ করেইনি; বরং চুক্তিবিরোধী ও পাহাড়িদের স্বার্থের পরিপন্থী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চুক্তি স্বাক্ষরকারী জেএসএস এবং চুক্তি মোতাবেক গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটিকে পাশ কাটিয়ে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি মূল্যায়ন, অগ্রগতি ও পরিবীক্ষণসংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। আর চুক্তিবিরোধী এই কমিটির মাধ্যমে পার্বত্য চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৬৫টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে মর্মে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। অথচ পার্বত্য চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে মাত্র ২৫টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে। অবশিষ্ট ৪৭টি ধারা হয় সম্পূর্ণভাবে অবাস্তবায়িত অবস্থায়, নয়তো আংশিক বাস্তবায়িত করে অথর্ব অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে গত ৯ মার্চ কুয়াকাটায় এবং ২০ আগস্ট জাতীয় সংসদ ভবনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির যথাক্রমে সপ্তম ও অষ্টম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই দুটি সভাসহ আগের সভাগুলোতে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে সরকারের অসহযোগিতা ও গড়িমসির কারণে বর্তমানে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটিও অকার্যকর সংস্থায় পরিণত হতে বসেছে।