নবজাতকের চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে এসে লিফট দুর্ঘটনায় লাশ হয়ে ফিরলেন বাবা
লিমা আক্তারের গর্ভ থেকে জন্ডিস নিয়েই ভূমিষ্ট হয় তাঁর দ্বিতীয় মেয়ে। বয়স মাত্র ছয় দিন। নবজাতকের চিকিৎসার জন্য বাবা জাহিদুল ইসলাম নিয়ে যান গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দুই দিন আগে নবজাতক ওয়ার্ডে মেয়েকে ভর্তি করেন। জরুরি প্রয়োজনে গতকাল মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালের ১০ তলা থেকে নিচতলায় নামার জন্য লিফটের সামনে এসে বোতাম চাপেন তিনি। এ সময় লিফটের দরজা খুলে গেলেও পাটাতন না আসায় জাহিদুল পা রাখতেই নিচে পড়ে যান। ঘটনাস্থলে তাঁর মৃত্যু হয়। এ সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর শ্যালিকাসহ অন্য কয়েকজন রোগীর স্বজন অল্পের জন্য রক্ষা পান।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত জাহিদুল ইসলাম (৪০) কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার হাসনাবাদ গ্রামের আবদুল গফুরের ছেলে।
তবে এমন দুর্ঘটনা হাসপাতালটিতে এটিই প্রথম নয়। এর আগেও হাসপাতালে পৃথক লিফট দুর্ঘটনায় দুই রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গতকাল রাতের ঘটনার সঠিক কারণ জানতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
স্বজনেরা জানান, জাহিদুল ইসলাম দীর্ঘদিন সৌদি আরবে প্রবাস জীবন কাটিয়ে দুই বছর আগে দেশে ফিরে বাড়িতেই কাজকর্ম করতেন। তাঁর স্ত্রী লিমা আক্তার দ্বিতীয়বারের মতো অন্তঃসত্ত্বা হলে দুই মাস আগে গাজীপুর মহানগরের কুনিয়া এলাকায় বাবা আবুল হোসেনের বাড়িতে চলে আসেন। সন্তান প্রসবের সময় স্ত্রীর পাশে থাকতে ছুটে আসেন জাহিদও। ছয় দিন আগে টঙ্গীর আহসান উল্লাহ জেনারেল হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে মেয়েসন্তান প্রসব করেন লিমা। জন্মের পরই জন্ডিস দেখা দেয় নবজাতকের।
জাহিদুলের শ্যালিকা সুমাইয়া বলেন, শিশুটির চিকিৎসা করানোর জন্য দুই দিন আগে টঙ্গী হাসপাতাল থেকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। জরুরি কাজে নিচে নামার সময় লিফট থেকে নিচে পড়ে তাঁর দুলাভাই মারা যান। নবজাতক সন্তানের চিকিৎসা করাতে এসে হাসপাতালে এমন করুণ মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না সুমাইয়া।
হাসপাতালের দায়িত্বরত আনসার সদস্য আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরাও এসেছিলাম। পরে লিফটের গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে তাঁকে (জাহিদুল) রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এই লিফটে কয়েক দিন ধরে সমস্যা ছিল। তবে কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বা কাউকে সর্তকও করেনি।’
এর আগে চলতি বছরের ১২ মে তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফটে আটকে পড়ে মমতাজ (৫০) নামের এক রোগীর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ৩ মে চিকিৎসা নিতে আসা জিল্লুর রহমান (৭০) নামের এক রোগী হাসপাতালের ১২ তলায় লিফটের পাশের একটি ফাঁকা দিয়ে পড়ে নিহত হন।
হাসপাতালের পরিচালক আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতের এ ঘটনার পর চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে (সিভিল) প্রধান করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালকের প্রতিনিধি, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) এবং হাসপাতালের সহকারী পরিচালক। কমিটিকে এক দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কারও গাফিলতি পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
গাজীপুর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাহেদুল ইসলাম বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই হস্তান্তর করা হয়েছে।