ছেলের যুক্তরাজ্যে যাওয়ার ভিসা পাওয়ার খবর জানতে পারলেন না বাবা

হাসপাতালে ৯ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল ছইল মিয়া মারা গেছেন
ছবি: সংগৃহীত

পরিবারে আয়ের একমাত্র অবলম্বন সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা। সেটি চালিয়ে সংসার খরচ আর ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাতেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মজিদপুর গ্রামের ছইল মিয়া (৫২)। অনেক আশা ছিল বড় ছেলে সালেহ আহমেদকে পড়াশোনার জন্য যুক্তরাজ্যে পাঠাবেন। অবশেষে ১৪ মার্চ সালেহ যুক্তরাজ্য যাওয়ার স্টুডেন্ট ভিসা পান। তবে ওই দিন এ সংবাদ পাওয়ার আগেই সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ছইল মিয়া।

হাসপাতালে ৯ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল ছইল মিয়া না ফেরার দেশে চলে গেছেন। আজ শুক্রবার ময়নাতদন্তের পর লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে সেখানে স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে ছইল মিয়ার লাশ দাফন হওয়ার কথা।

পুলিশ ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৪ মার্চ জগন্নাথপুর থেকে যাত্রী নিয়ে সুনামগঞ্জ যাচ্ছিলেন ছইল মিয়া। পথে সুনামগঞ্জ শহরের প্রবেশমুখ হালুয়ারগাঁও এলাকায় বিপরীত দিক থেকে  আসা একটি মালমাহী ট্রাক ওই অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই যাত্রী প্রাণ হারান। গুরুতর আহত হন ছইল মিয়া। দুর্ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ৯ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে ছইল মিয়ার মৃত্যু হয়।

দুই ছেলে, এক মেয়ে, স্ত্রী ও মা নিয়ে ছইল মিয়ার সংসার। ছইল মিয়ার আকস্মিক এ মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছেন না। বড় ছেলে সালেহ আহমেদ বলেন, ‘বাবা নিজে দিনরাত পরিশ্রম করে আমাদের পড়ালেখার খরচ ও ভরণপোষণ চালাতেন। এইচএসসি পাস করার পর যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুযোগ পাই। ১৪ মার্চ যেদিন স্টুডেন্ট ভিসা পাই বাবা তখন হাসপাতালে। তাঁকে আর খুশির খবরটি জানানো হলো না। বাবাকে হারানোর বেদনা নিয়ে ২৮ মার্চ আমি যুক্তরাজ্যে যাব।’

ছইল মিয়ার চাচাতো ভাই বশির আহমেদ বলেন, কমপক্ষে ৩০ বছর ধরে একজন দক্ষ চালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কখনো দুর্ঘটনার শিকার হননি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে পুরো পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ছইল মিয়া একজন বিশ্বস্ত অটোরিকশাচালক ছিল। তিনি থানা–পুলিশের বিভিন্ন অভিযানের সময় যাতায়াতের বিষয়ে পুলিশকে সহায়তা করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।

প্রসঙ্গত, ওই দুর্ঘটনায় জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের ধাওরাই গ্রামের যুবক হাদিউল কামালী (৩৮) ও চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দা নাসির আলম (৪০) ঘটনাস্থলে মারা যান।