মেহেরপুরে তামাক চাষে ব্যবহার হচ্ছে ভর্তুকির সার

  • তামাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকদের সার কিনতে নগদ টাকা দেয়।

  • এই কারণে সরকারি ভর্তুকির সার চলে যাচ্ছে তামাক চাষে। বাজারে সার পাওয়া যাচ্ছে না।

তামাকফাইল ছবি: প্রথম আলো

কৃষিপ্রধান জেলা মেহেরপুরে ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে তীব্র রাসায়নিক সারের সংকটে পড়েছেন কৃষকেরা। সরকার কৃষকদের জন্য ভর্তুকি দিয়ে সার সরবরাহ করলেও তার বেশির ভাগই তামাক চাষে ব্যবহার হচ্ছে। ফলে অন্য ফসল ফলাতে চাহিদামতো সার পাচ্ছেন না কৃষকেরা।

কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে অন্যান্য ফসল ফলাতে যে পরিমাণ সারের প্রয়োজন হয়, তামাক চাষে তার কয়েক গুণ বেশি সার লাগে। যদিও তামাক উৎপাদনের জন্য সরকারের ভর্তুকির কোনো সার বরাদ্দ থাকে না। তামাক কোম্পানিগুলো আগে নিজেরাই সার সরবরাহ করলেও বর্তমানে কৃষকদের সার কিনতে নগদ টাকা দিচ্ছে। ফলে সরকারি ভর্তুকির সার চলে যাচ্ছে তামাক চাষে। অন্য গুরুত্বপর্ণ ফসলের জন্য বাজারে সার পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে ডিএপি সারের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।

তামাক চাষে অনেক বেশি সার ব্যবহারের কারণে সবজিসহ অন্য ফসলের সার পেতে কৃষকদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

জেলার গাংনী উপজেলার রাধাগোবিন্দপুর ধলা গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম এবার ৬ বিঘা জমিতে ফুলকপির চাষ করেছেন। এ জন্য তাঁর ৬ বস্তা  টিএসপি, ৬ বস্তা ডিএপি, ৩ বস্তা এমপি ও ৩ বস্তা ইউরিয়া সারের প্রয়োজন ছিল। জহুরুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি ডিলারের কাছে মাত্র ৪ বস্তা টিএসপি, ১ বস্তা ইউরিয়া ও ১ বস্তা এমওপি সার ডিলারদের থেকে কিনতে পেরেছেন। সারের অভাবে ফুলকপি সময়মতো বড় হচ্ছে না। এতে তাঁর বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হবে।

একই এলাকার কৃষক মোফাজ্জেল হোসেন চলতি মৌসুমে তিনি ১১ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করছেন। মোফাজ্জেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দুটি তামাক কোম্পানির তালিকাভুক্ত চাষি। তামাক চাষের জন্য কোম্পানি থেকে শুধু রাসায়নিক সার হিসেবে সালফেট অব পটাশ (এসওপি) ও অন্যান্য সার কেনার জন্য নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে। আমার ১১ বিঘা জমিতে ১১০ বস্তা ডিএপি, ২২ বস্তা এমপি, ২২ বস্তা ইউরিয়া, ১১ বস্তা সালফেটের প্রয়োজন পড়বে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে ১৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ১ হাজার ৩৬৫ হেক্টরে গম, ১৯ হাজার ২৬৫ হেক্টরে বোরো ধান, ৪ হাজার ৫৬৫ হেক্টরে পেঁয়াজ ও ৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজির চাষ হয়েছে। এর বিপরীতে চলতি মাসে বিএডিসি ও বিসিআইসি থেকে জেলায় ৩ হাজার ৯৬৪ মেট্রিক টন ইউরিয়া, ১ হাজার ৭৮১ মেট্রিক টন টিএসপি, ২ হাজার ৪৫২ মেট্রিক টন ডিএপি ও ১ হাজার ৮২৪ মেট্রিক টন এমওপি বরাদ্দ রয়েছে।

এদিকে জেলায় এ বছর ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ চলছে, যা গত বছরে ছিল ২৬ হাজার হেক্টর। এর বিপরীতে কোনো ভর্তুকির সার বরাদ্দ নেই।

সদর উপজেলার বিসিআইসির ডিলার (পরিবেশক) মিরাজুল হক বলেন, কৃষকেরা সবজি চাষের নামে তামাক চাষে ডিএপি ব্যবহার করছে। এই কারণে ডিএপি সারের সংকট দেখা দিয়েছে।

গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তামাক চাষে অনেক বেশি সার ব্যবহারের কারণে সবজিসহ অন্য ফসলের সার পেতে কৃষকদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বিদেশি তামাক কোম্পানির প্রতিনিধি বলেন, তামাক কোম্পানি কৃষকদের তামাক চাষে সুবিধবার জন্য এসওপি সার বিদেশ থেকে আমদানি করে সরবরাহ করে। ডিএপি, এমওপি, ইউরিয়া, জিপসাম সার বাইরে থেকে কেনার জন্য নগদ টাকা দেওয়া হয়।

জেলা সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাফিজুর রহমান বলেন, মেহেরপুরে রবি মৌসুমে তামাক চাষের কারণে সারসংকট তৈরি হয়। তামাকে অধিকমাত্রায় সার ব্যবহারের কারণে সবজিসহ অন্যান্য ফসলের জন্য কৃষকদের সার পেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে সারসংকট তৈরি হবে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপপরিচালক বিজয় কৃঞ্চ হালদার বলেন, তামাক চাষ কৃষিজমি ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হয়।