নেত্রকোনায় নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকানো মেয়েটি এইচএসসি পাস করেছেন

বাল্যবিয়ে
প্রতীকী ছবি

নেত্রকোনার বারহাট্টায় নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকানো মেয়েটি এইচএসসি পাস করেছেন। ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের অধীন মানবিক শাখা থেকে তিনি পাস করেন। তাঁর বাল্যবিবাহ ঠেকাতে সহায়তা করা বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে তখনকার দায়িত্বে থাকা ফরিদা ইয়াসমিন (বর্তমানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব) প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান।

পরে মেয়েটির সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন প্রথম আলোর প্রতিবেদক। তবে মেয়েটি তাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ জানানোয় প্রথম আলো তাঁর পরিচয় প্রকাশ করছে না।

মেয়েটি বলেন, ২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট তাঁর বিয়ের কথা ছিল পূর্বধলা উপজেলার এক যুবকের সঙ্গে। তখন তিনি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। ওই দিন দুপুরে তিনি লুকিয়ে মুঠোফোনে বারহাট্টার তখনকার ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিনকে বিষয়টি জানান। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইউএনও বিয়েবাড়িতে হাজির হন। পরে পরিবারকে বুঝিয়ে ও মেয়েটির লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বিয়ে বন্ধ করেন। মেয়েটি এখন পড়াশোনা করে ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখছেন।

মেয়েটি জানায়, তাঁর বাবা পেশায় কাঠমিস্ত্রি। আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় তাঁকে বাল্যবিবাহ দিতে চেয়েছিল পরিবার। পরে প্রশাসন বিয়ে বন্ধ করে তাঁদের পাশে দাঁড়ায়।

মেয়েটির মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। তেমন লেখাপড়া জানি না। তাই না বুঝে বাল্যবিবাহ দিতে চেয়েছিলাম। আমার মেয়েটি সচেতন ছিল বলেই রক্ষা পেয়েছে। এখন আরও পড়তে চায় মেয়ে। আর বাধা দেব না।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ফরিদা ইয়াসমিন বারহাট্টায় দায়িত্ব পালনকালে দুই বছরের চেষ্টায় গত ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট উপজেলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করেন। গত ২০১৭ সালের ৯ মে বারহাট্টার ইউএনও হিসেবে যোগদানের পর তিনি উপজেলায় ৬৭টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেন। এর মধ্যে অসচ্ছল পরিবারের স্কুল থেকে ঝরে পড়া আটজন মেয়ের খরচ জুগিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন। তাঁদের একজন এবার এইচএসসি পাস করা মেয়েটি। বাল্যবিবাহ ঠেকানোর স্বীকৃতি হিসেবে ফরিদা ইয়াসমিন ফারাজ হোসেন সাহসিকতা পুরস্কার ২০১৯ অর্জন করেন।