সাইফুল বলেন, দুই ছেলের মধ্যে একজন পঞ্চম শ্রেণিতে, আরেক ছেলে প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। আগে ডিম বিক্রি করে খরচ বাদে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা থাকত। এখন দিন-রাত মিলে ৩০০-৪০০ টাকার বেশি থাকে না। পদ্মা সেতু চালুর পর ঘাটে যানবাহন না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।

কয়েকজন হকার বলেন, দৌলতদিয়ায় দুটি হকার সংগঠনের দুই হাজারের বেশি সদস্য আছেন। একজন হকার প্রতিদিন সকাল ছয়টায় ফেরিতে উঠলে পরের দিন সকাল ছয়টায় নামতেন। পদ্মা সেতু চালুর আগে প্রতিদিন দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে কয়েক হাজার গাড়ি ও যাত্রী পারাপার হতো। যে কারণে ফেরি চলাচল করত ১৮-১৯টি। ঘাট রমরমা ছিল, হকারদের বেচাকেনা বেশ হতো। ফেরি বেশি থাকায় প্রতিটি ফেরিতে তুলনামূলক হকারের সংখ্যা কম থাকত। এখন গাড়ি কম থাকায় ফেরি কমে গেছে, অথচ হকারের সংখ্যা বেড়েছে।

হকার হোসেন সরদারের বাড়ি ছিল দৌলতদিয়া সাইনবোর্ড এলাকায়। এখন ফেরিঘাটের কাছে মা–বাবা আর স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। তিনি ১২ বছর ধরে ডিমের ব্যবসা করছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন একটি ফেরিতে সাত-আটজন হকার উঠতাম। ফেরির সংখ্যা বেশি থাকায় হকার কম ছিল। ব্যবসাও অনেক ভালো হতো। বর্তমানে ফেরি কম, অথচ হকারের সংখ্যা বেশি। বেচাকেনা ভালো হচ্ছে না। ২০০-৩০০ টাকার বেশি রোজগার করা কঠিন হয়ে পড়ছে।’

ঝালমুড়ি বিক্রেতা রিপন শেখের বাড়ি উত্তর দৌলতদিয়ার আক্কাছ আলী হাইস্কুলের কাছে। মা–বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার। তিনি বলেন, বর্তমানে গাড়ি নেই, এরপর ফেরিও কম। এ ছাড়া কুয়াশায় প্রায় প্রতি রাতে ফেরি বন্ধ থাকছে। এ কারণে রাতে যাত্রীবাহী পরিবহন তেমন আসছে না। পরিবহন পারাপার না হলে, যাত্রী না থাকলে ঝালমুড়ি, ডিম বা অন্যান্য জিনিস কারা কিনবেন? কুয়াশার কারণে রাতের বেলা বেশির ভাগ পরিবহন পদ্মা সেতু ঘুরে যাচ্ছে। ফলে ব্যবসা প্রায় বন্ধের পথে।

রিপন শেখ বলেন, ‘আগে প্রতিদিন তিন–সাড়ে তিন হাজার টাকার ঝালমুড়ি বিক্রি করতাম। এখন ১ হাজার ২০০ টাকারও বিক্রি করতে পারছি না। ঝালমুড়ির হকার বেশি থাকায় চার দিন পর পর এক দিন করে ডিউটি পেতাম। আগে বেশি বেচাকেনা হওয়ায় পোষাত। বর্তমানে ২৪ ঘণ্টায় বেচাকেনা শেষে ৩০০-৪০০ টাকার বেশি থাকে না। তারপর চার দিন পর ডিউটি থাকায় কিছুই থাকে না। বাধ্য হয়ে পাশাপাশি বাড়িতে কৃষিকাজ করছি।’