নেত্রকোনায় মুশফিকুর হত্যার আট বছরেও বিচার শেষ হয়নি, হতাশায় পরিবার

মুশফিকুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায় আলোচিত মুশফিকুর রহমান ওরফে তুহিন (৩৮) হত্যার আট বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ রোববার। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার এখনো শেষ হয়নি। আদালতে অভিযোগপত্র জমা হলেও আসামিরাও জামিনে বাইরে থাকায় পরিবারের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

মুশফিকুর রহমান উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের মৃত ফজলুর রহমান ছেলে। ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বসতঘরে ঢুকে মুশফিকুরের ওপর হামলা চালায় প্রতিপক্ষের লোকজন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পরদিন নিহত ব্যক্তির বড় ভাই লুৎফর রহমান বাদী হয়ে ২৭ জনকে আসামি করে আটপাড়া থানায় মামলা করেন। মামলায় লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দা ও আটপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সুলতান উদ্দিনকে প্রধান আসামি করা হয়।

মুশফিকুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর নিজ বাড়িতে ছিলেন। ‘অপরাধ জগৎ’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন।

স্থানীয় বাসিন্দা, পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আটপাড়া উপজেলার হাঁসকুরি বিলে ইজারা নিয়ে মুশফিকুরের সঙ্গে একই উপজেলার লক্ষ্মীপুর, কুতুবপুর ও নারাছাতল গ্রামের বেশ কয়েক ব্যক্তির বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে প্রতিপক্ষের লোকজন ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে মুশফিকুরের বসতঘরে ঢুকে তাঁর ওপর হামলা চালায়। ঘটনার সময় ধস্তাধস্তিতে লক্ষ্মীপুর গ্রামের তাজাত খাঁ ও আমীর খাঁ নামের দুই ব্যক্তি আহত হন। ওই দিন পুলিশ আহত দুজনসহ লক্ষ্মীপুর গ্রামের রহমত মিয়া ও বাবুল মিয়া নামের মোট চার ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। পরে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে তাঁরা সবাই জামিনে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মুশফিক হত্যা মামলাটির তদন্তভার ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর আটপাড়া থানার পুলিশের কাছ থেকে সিআইডিকে দেওয়া হয়। সিআইডি দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়। সিআইডি ময়মনসিংহ বিভাগের তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজাহান তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ১২ অক্টোবর ২২ জনের নামে অভিযোগপত্র জমা দেন।

মামলার বাদী লুৎফর রহমান বলেন, অভিযোগপত্রে হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের নাম বাদ পড়ায় আদালতে নারাজি দেওয়া হয়। আদালত তা মঞ্জুর করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দেন। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই ৩৪ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পিবিআই।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, মামলাটি এখন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। এখন সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে আছে।

ভাই হত্যার বিচার চেয়ে লুৎফর রহমান বলেন, ‘ভাইকে তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু ভাই হত্যার বিচার দেখে যেতে চাই। হত্যার আট বছর চলে গেলেও এখনো বিচার পাচ্ছি না। বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় আমরা এখন হতাশায় ভুগছি।’