রায়ের ১৪ বছর পর গ্রেপ্তার কেরানীগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি
রায় ঘোষণার ১৪ বছর পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঢাকার কেরানীগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রোহিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য আনোয়ার হোসেন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তার ব্যক্তি হলেন রোহিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন (৬৪)। তাঁর বাড়ি কেরানীগঞ্জ মডেল থানার রোহিতপুর ইউনিয়নে। বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে তাঁকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সংবাদ সম্মেলেনে খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার কামাল উদ্দীন ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালে এলাকায় একটি সন্ত্রাসী দল গঠন করে অবৈধ বালুর ব্যবসা, ভূমি দখল ও ত্রাণের মালামাল আত্মসাৎ করতেন। নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন ওই ইউপির সদস্য ছিলেন। পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে আড়তদারের ব্যবসা করতেন। বিভিন্ন সময় তিনি কামাল উদ্দীনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অপরাধ, মাদক, ভূমিদস্যুতা, ত্রাণ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতেন। এ কারণে আনোয়ার হোসেন স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। কামালের অবৈধ বালুর ব্যবসা ও ভূমিদস্যুতা নিয়ে সে সময় বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সংবাদের পেছনে আনোয়ারের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে ধারণা করেন কামাল। আনোয়ারের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এবং এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তারের জন্য আনোয়ারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন কামাল।
র্যাব জানায়, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি আনোয়ার হোসেন সৈয়দপুর ঘাটে মাছের আড়তে যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। নদী পার হওয়ার জন্য নৌকায় ওঠার সময় কামালের নেতৃত্বে ৮ থেকে ১০ জন দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আনোয়ার হোসেনকে কুপিয়ে জখম করে। পরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আনোয়ার হোসেন মারা যান। এ ঘটনায় আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ৩১ মে কামাল উদ্দীনসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আদালত ২০০৯ সালের ২৫ আগস্ট পলাতক আসামি কামাল উদ্দীনসহ দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও তিনজনকে খালাস দেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, মামলার পর থেকে কামাল উদ্দীন গ্রেপ্তার এড়াতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকেন। একপর্যায়ে ২০০৭ সালে কৌশলে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে চলে যান। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে নিজের পরিচয় গোপন রেখে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বসবাস শুরু করেন। গোয়েন্দা নজরদারির ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার রাতে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি জানিয়েছেন কামাল।