সড়ক নির্মাণের চার মাসেই ধস, যান চলাচল বন্ধ 

সড়কটির দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটার। ইট বিছানো সড়কটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৫৯ লাখ টাকা।

খালের ভেতর সড়ক ভেঙে পড়েছে। সরু সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সম্প্রতি খুলনার কয়রা উপজেলার বতুল বাজার-ঝিলেঘাটা সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

সড়কটি গত জুন মাসে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। চার মাস পরই সড়কের সুরক্ষা দেয়াল (গাইড ওয়াল) হেলে পড়েছে। সড়কটিতে ইটের গাঁথুনিসহ বিভিন্ন স্থান ধসে গেছে; ফাটল ধরেছে আরও কিছু অংশে। ওই সড়ক দিয়ে বর্তমানে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের বতুল বাজার থেকে ঝিলেঘাটা বাজার পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটার। ইট বিছানো সড়কটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৫৯ লাখ টাকা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার ও যথাযথভাবে পাইলিং না করায় সড়কটির এ দশা হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলার বতুল বাজার এলাকায় এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে (এইচবিবি) দরপত্র আহ্বান করা হয়। সড়ক নির্মাণের কাজটি পায় মেসার্স সরকার এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের মার্চ মাসে কার্যাদেশ পেয়ে জুন মাসে কাজ শেষ করেন ঠিকাদার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়।

কয়রা উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার পিচঢালা রাস্তা পেরোলে ঝিলিয়াঘাটা বাজার। বাজার পেরিয়ে সড়ক চলে গেছে বতুল বাজারের দিকে। এক কিলোমিটার সড়কের এক পাশে রয়েছে খাল। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ঝিলিয়াঘাটা বাজার পেরিয়ে একটু সামনে সড়কের বাঁ পাশের খালের মধ্যে ভেঙে পড়ে আছে গাইড ওয়াল। রাস্তার ইট ও মাটি ভেঙে পড়েছে গাইড ওয়ালের ওপর। সড়ক ভেঙে সরু হওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ। আরও সামনে এগোলে দেখা যায়, পরপর দুটি জায়গায় গাইড ওয়াল ভেঙে পড়ে আছে। আবার কোথাও সড়কের দুই পাশ ধসে ইট পড়েছে খালের মধ্যে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়কটি নির্মাণে ঠিকাদার খরচ কমাতে বালুর পরিবর্তে সড়কের পাশের ধুলাবালু ব্যবহার করেছেন। ইট বিছানোর আগে ছয় ইঞ্চি উঁচু বালু ভরাটের কথা থাকলেও কোথাও তিন ফুট, আবার কোথাও চার ফুট ভরাট করা হয়েছে। নিম্নমানের ইট ব্যবহার করে কাজ করা হয়েছে। ফলে সড়কটির কোথাও ধসে গেছে, আবার কোনো কোনো জায়গা দেবে গেছে। 

ওই এলাকার ইউপি সদস্য আবুল হাসান বলেন, ‘সড়কের নির্মাণকাজ নিম্নমানের হওয়ায় আমরা কাজ বন্ধ রাখতে বলেছিলাম। একই সঙ্গে সড়কের দুই পাশে মাটি ভরাট ও প্যালাসাইডিং করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু ঠিকাদার কিছুদিন কাজ বন্ধ রেখে আবারও একইভাবে কাজ শেষ করে চলে গেছেন। এখন মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’

জানতে চাইলে কাজের ঠিকাদার কনক সরকার বলেন, সড়ক নির্মাণে অনিয়ম হয়নি। ওই সড়কের এক পাশে বড় খাল রয়েছে। কাজ শেষ করার পর ভারী বৃষ্টি হওয়ায় দুই পাশ ধসে পড়েছে। বর্ষার পর শুকনা মৌসুমে ওই সড়ক ফের সংস্কার করা হবে।

পিআইও ইমরুল কায়েস বলেন, কাজের চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ হওয়ার সময় থেকে এক বছর সড়কটির কোথাও ক্ষতিগ্রস্ত হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেরামত করতে বাধ্য থাকবে।