সড়ক নয়, যেন চষা জমি

কয়রার কাটকাটা থেকে হরিহরপুর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়ক ভাঙাচোরা। যথাযথভাবে সংস্কার না করায় সড়কটির এই দুরবস্থা।

খুলনার কয়রা উপজেলার কাটকাটা থেকে হরিহরপুর পর্যন্ত সড়ক এবড়েখেবড়ো হয়ে আছে। গতকাল হরিহরপুর এলাকা থেকে তোলা ছবিপ্রথম আলো

সড়ক কোথাও কোথাও ভাঙাচোরা। অনেক স্থান ধসে পড়েছে নদীতে। বৃষ্টি হলে কাদাপানিতে একাকার। এই দুরবস্থা খুলনার কয়রা উপজেলার কাটকাটা থেকে হরিহরপুর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়কের। সংস্কার না করায় সড়ক এখন যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ১৮টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সড়ক সংস্কারের জন্য জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে বারবার দাবি জানানো হচ্ছে; কিন্তু প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছেন না কেউই। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে এ পথে চলাচল করতে হচ্ছে তাঁদের।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কয়রা উপজেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের কাটকাটা থেকে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের গোলখালী পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার সড়ক আছে। এই সড়কের ওই পাঁচ কিলোমিটার পড়েছে উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নে। এই অংশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আধীন। আর বাকি ৯ কিলোমিটার এলজিইডির অধীন। সড়কটির পাঁচ কিলোমিটার অংশ এক বছরের বেশি সময় ধরে বেহাল। উত্তর বেদকাশীর তিনটি গ্রাম ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের মানুষকে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে এ সড়ক ব্যবহার করতে হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ইট বিছানো সড়কের অর্ধেক মাটি ধসে গেছে পাশের শাকবাড়িয়া নদীতে। সড়কের বিভিন্ন স্থানের ইট উঠে এবড়োখেবড়ো হয়ে পড়েছে। ভাঙাচোরা এই সড়কের কিছু অংশে মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল ছাড়া আর কোনো যানবাহন চলতে পারে না। আবার কিছু দূর সড়কের দুই পাশের অংশে মাটি না থাকায় কোনো যানবাহনই চলাচল সম্ভব হচ্ছে না। ফলে হেঁটে যাতায়াত করেন স্থানীয় লোকজন।

হরিহরপুর গ্রামের বাসিন্দা বিপ্লব কুমার মণ্ডল বলেন, এক বছর আগে ইট-বালু দিয়ে সড়কটি সংস্কার করা হয়েছিল। এক মাস যেতে না যেতেই আবার বেহাল হয়ে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালে সড়কটির নদীতীরবর্তী অংশ চিকন হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া সম্পূর্ণ সড়কের অবস্থা এতটা খারাপ যে এলাকায় কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। রোগীকে নিতে হয় নদীপথে। এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিয়েও কোনো লাভ হয় না।

 দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের মাটিয়াভাঙ্গা গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়েই চলে আমার সংসার। সড়কের ভাঙা অংশের কারণে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলেও উঠতে চান না কেউ। প্রতিনিয়ত সেখানে দুর্ঘটনা ঘটছে।

উত্তর বেদকাশী ইউপির চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল রয়েছে। মাঝেমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের বাজেট দিয়ে ঠিক করা হলেও তা বেশি দিন টেকে না।

সড়কটি সংস্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে কয়রা উপজেলা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু ১৪ কিলোমিটার সড়কের প্রায় ৫ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন। সড়কের নদীতীরবর্তী অংশ সংস্কারের জন্য তাদের তাগিদ দিয়েও দ্রুত কাজ হচ্ছে না। এ কারণে এলজিইডির প্রকল্পের কাজ ওই অংশে বন্ধ রয়েছে।

পাউবো খুলনা-২ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মশিউল আবেদীন বলেন, ‘সড়কটির মাটির কাজ খুব শিগগির শুরু হবে। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা অর্থায়ন করছে। আমাদের কাজ শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ এলজিইডি থেকে নেওয়া হবে।’

কয়রা উপজেলা প্রকৌশলী দারুল হুদা বলেন, সড়কের ওই অংশে কাজ করার জন্য এর আগে একাধিকবার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, কিন্তু পাউবোর অসহযোগিতার কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি এলজিইডির জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।