বৃদ্ধ বয়সে বাবা–মাকে ভাগ করা যাবে না

আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে চত্বরে শোভাযাত্রা বের করা হয়। রোববার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

প্রবীণেরা পরিবার ও সমাজে অবহেলিত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা নানাভাবে অবহেলার শিকার হন। মা-বাবা শত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তাঁর সন্তানকে কখনো ভাগ করেন না। তেমনি বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মাকে ভাগ করা যাবে না। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ কাজে লাগিয়ে নবীনদের এগিয়ে যেতে হবে। তাই প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে পরিবার ও সমাজে যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে। প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবাসহ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস উপলক্ষে আজ রোববার নারায়ণগঞ্জে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

সকালে জেলা প্রশাসন, জেলা সমাজসেবা কার্যালয় ও বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে ‘সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় প্রবীণদের জন্য প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণে প্রজন্মের দায়বদ্ধতা’ প্রতিপাদ্যে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক আসাদুজ্জামান সরদারের সভাপতিত্বে সহকারী পরিচালক সোলায়মান হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক, জেলা সিভিল সার্জন মুশিউর রহমান, বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক প্রমুখ।

স্বাগত বক্তব্যে মোজাম্মেল হক বলেন, প্রবীণ জনগোষ্ঠী সমাজে অবহেলিত। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানদের যত্নশীল হতে হবে। ছেলেমেয়েদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে, যাতে কোনো বাবা-মাকে প্রবীণ নিবাসে যেতে না হয়। তিনি বলেন, ১৯৯৮ সাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রবীণ হিতৈষী সংঘ জেলা শাখা প্রবীণদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তাঁদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে।

প্রবীণ জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্যগত সমস্যায় বেশি ভোগেন, উল্লেখ করে জেলা সিভিল সার্জন মুশিউর রহমান বলেন, ‘প্রবীণদের কর্মক্ষম ও সুস্থ রেখে আমাদের দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। হাসপাতালগুলোতে প্রবীণদের জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে চিকিৎসাসেবা প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রবীণরা যাতে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারেন, সরকারের উদ্যোগ রয়েছে। প্রবীণেরা অবহেলিত নন, তাঁরা আমাদের সমাজ ও দেশের সম্পদ। তাই প্রবীণদের প্রতি যত্নবান ও দায়িত্বশীল হতে হবে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক তাঁর বক্তব্যে বলেন, শত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও মা-বাবা তাঁর সন্তানকে কখনো ভাগ করেননি। তাই বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মাকে ভাগ করা যাবে না। সরকার প্রবীণদের জন্য বয়স্ক ভাতাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। এতে পরিবার ও সমাজে প্রবীণদের মর্যাদা বেড়েছে। তিনি বলেন, প্রবীণদের সুরক্ষা নিশ্চিতে সামাজিক দায়বদ্ধতা বেশি। এই দিবসের অঙ্গীকার হোক, প্রবীণদের প্রতি শুধু সন্তানদের ভালো ব্যবহার নয়, সমাজের সবার ভালো আচরণ করা উচিত। সরকার সমাজের বাস্তবতায় বৃদ্ধ পিতা-মাতার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ভরণপোষণ আইন তৈরি করেছে। নবীন-প্রবীণদের নিয়ে দেশ, সমাজ এগিয়ে যাবে।

আলোচনা সভার আগে একটি শোভাযাত্রা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণ প্রদক্ষিণ করে। আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল হক, সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রকল্প সমন্বয় পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ভাসানী।