দিনে অতিরিক্ত আদায় হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা

বালুভর্তি প্রতি ট্রাকে ১০০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন চালকেরা।

ট্রাকচালকের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন এক তরুণ। গত সোমবার দুপুরে রাজশাহীর পবা উপজেলার শ্যামপুর বালুঘাটের পদ্মা নদীর বাঁধে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর পবা উপজেলার শ্যামপুর বালুঘাটে নতুন করে ট্রাকচালকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। বালুভর্তি প্রতি ট্রাকে ১০০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন চালকেরা। এ হিসাবে দিনে আদায় হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শ্যামপুরের এই ঘাটের বালুভর্তি ট্রাক আগে কাটাখালী পৌরসভার দেওয়ানপাড়া রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করত। খালি ট্রাকও একই রাস্তা দিয়েই বালুঘাটে আসত। ওই রাস্তা বেহাল হয়ে পড়েছে। গত রোববার থেকে খালি ট্রাকগুলো পদ্মা বাঁধ দিয়ে উত্তর দিকে চৌদ্দপায়ের রাস্তায় চলাচল করছে। তবে সিটি করপোরেশন থেকে বড় গাড়ি চলাচল বন্ধের জন্য বাঁধের ওপর বার (প্রতিবন্ধক) করে দিয়েছিল এক মাস আগে। শনিবার রাতে সেটা খুলে ফেলা হয়। ওই সময় বালুঘাটের ইজারাদারসহ স্থানীয় ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহের হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

কয়েকজন ট্রাকচালক বলেন, ট্রাক চলাচলের নতুন রাস্তা ব্যবহারের জন্য সিটি করপোরেশনকে টোল দিতে হয়, এই বলে বালুভর্তি ট্রাকের প্রতি ট্রিপ থেকে ১০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু কোনো আদায় রসিদ দেওয়া হচ্ছে না। তাঁদের জানামতে, এই টাকা ইজারাদারদের পকেটে যাচ্ছে। স্থানীয় কাউন্সিলরও থাকতে পারেন সেই তালিকায়।

সোমবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, চৌদ্দপায় দিয়ে একসঙ্গে চার-পাঁচটি ট্রাক দক্ষিণে পদ্মা নদীর দিকে যাচ্ছে। সেই ট্রাক মিজানের মোড়ের পাশে এসে শহর রক্ষা বাঁধে ওঠে। পরে বাঁধ দিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার পূর্ব দিকে গিয়ে বালুঘাটে যায়। তবে মিজানের মোড়ের পাশে রাস্তায় দেওয়া সিটি করপোরেশনের বার খুলে রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। রাস্তার দুই পাশে পিলার এখনো আছে। ট্রাক যাওয়ায় ওই এলাকার শহর রক্ষা বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বালুঘাটে মিজানের মোড় থেকে খালি ট্রাক এসে বালুঘাটে বালু বোঝাই করে দেওয়ানপাড়ার রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। বালুভর্তি ট্রাককে তিনটি জায়গায় টাকা দিতে হয়। কাটাখালী পৌরসভাকে প্রতি ট্রাকে ৩০০ টাকা, বালু সমিতিতে ১০০ টাকা ও নতুন করে বাঁধের ওপর হয়ে সিটি করপোরেশনের রাস্তা ব্যবহারের জন্য আরও ১০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। তবে এই ১০০ টাকা আদায়ে কোনো রসিদ দেওয়া হচ্ছে না ট্রাকচালকদের।

সোমবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ওই ১০০ টাকা আদায় করছেন মিনহাজুল ইসলাম নামের এক তরুণ। বালুভর্তি ট্রাক এলেই তিনি এগিয়ে গিয়ে ১০০ টাকা নিয়ে আসছেন। পরে খাতায় গাড়ির নম্বর দিয়ে লিখে রাখছেন। মিনহাজুল বলেন, আজ (সোমবার) দিয়ে দুই দিন হলো এই ১০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এই টাকা কে নিচ্ছেন, তা তিনি জানেন না। তাঁকে আদায় করতে বলা হয়েছে, তিনি এখানে তা–ই করছেন। তবে শুনেছেন, ট্রাক চলাচলের নতুন রাস্তার জন্য এই টাকা নেওয়া হচ্ছে।

এ সম্পর্কে কাউন্সিলর জাহের হোসেন বলেন, ওই বার দেওয়া হয়েছিল যাতে ভারী গাড়িগুলো এদিক দিয়ে না যায়। সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা যথাসম্ভব এটা জানেন। এটা খুলে দিলে খালি গাড়িগুলো চৌদ্দপায় হয়ে আসতে পারবে বালুঘাটে। তাই বারটি আপাতত কেটে দেওয়া হয়েছে। টাকা আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই ১০০ টাকা কোথায় যাচ্ছে, এটা আমার জানা নেই।’

কাটাখালী পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনোয়ার সাদাত বলেন, দেওয়ানপাড়া রাস্তা দিয়ে ট্রাক পাশ দিয়ে যেতে সমস্যা হয়। আবার সিটি করপোরেশনও ওই রাস্তা বার দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিল। সিটি করপোরেশনের রাস্তার মেইনটেইন খরচের জন্য ১০০ টাকা বাড়তি নেওয়া হচ্ছে।

কাটাখালী পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক ও বালুঘাটের ইজারাদার জনি ইসলাম বলেন, ১০০ টাকা তুলে ঘাট কর্তৃপক্ষই ব্যয় করবে। এই টাকা খরচ হবে রাস্তায় ঝাড়ু দেওয়া, পানি ছিটানোসহ বেশ কয়েকটি কাজে। সিটি করপোরেশনের ঐচ্ছিক একটি তহবিলে তাঁদের থোক টাকা দিতে হয়। যেদিন ওই বার কাটা হয়েছিল, সেদিন স্থানীয় কাউন্সিলর নিজে এসে কেটে দিয়েছেন। উনি নিশ্চয় সিটি করপোরেশনের অনুমতি ছাড়া কাটেননি।