যে নদে সাঁতরে প্রতিদিন স্কুলে যেতেন, সে নদেই গেল প্রাণ

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় টাঙ্গন নদে তলিয়ে যাওয়ার পর শিক্ষক তৈলক্ষ্য বর্মণকে উদ্ধারে অভিযান চালায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল
ছবি: প্রথম আলো

মোটরসাইকেল চালিয়েই স্কুলে যেতেন তিনি। শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে শুরু করেন নিয়মিত হাঁটাহাঁটি। বাড়ি আর স্কুলের দূরত্ব কিলোমিটারখানেক। মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে টাঙ্গন নদ। শুকনো মৌসুমে হেঁটেই এ পথ তিনি পাড়ি দিতেন। আর বর্ষা এলে সাঁতরে। সেটিই কাল হল তৈলক্ষ্য বর্মণের (৪৫)। গতকাল বিকেলে স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার সময় সাঁতরে নদ পার হতে গিয়ে তলিয়ে যান তিনি। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ভেসে ওঠে তাঁর লাশ।

তৈলক্ষ্য বর্মণ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দক্ষিণ বঠিনা ইসলামপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। ১৯৯৩ সাল থেকে তিনি বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকতা করে আসছেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মণ বলেন, বিদ্যালয়ের অপর পাশে নদের ওপারে বাড়ি হওয়ায় পানি কম থাকলে হেঁটে, আবার পানি বেশি থাকলে সাঁতরেই নদ পার হতেন তৈলক্ষ্য। গতকাল বুধবার বিদ্যালয়টির ছুটির পর বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে তিনি ঘাটপাড়া এলাকা দিয়ে সাঁতরে টাঙ্গন নদ পার হয়ে বাড়ি ফেরার সময় পানির স্রোতে তলিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাঁকে না পেয়ে ঠাকুরগাঁও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের খবর দেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও স্থানীয় লোকজন নদে তল্লাশি চালিয়েও তাঁর খোঁজ পাননি। পরে আজ সকালে রংপুর থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। বেলা একটার দিকে কাজীপাড়া এলাকায় তৈলক্ষ্য বর্মণের লাশ ভেসে উঠতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। সেখান থেকে ওই শিক্ষকের লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

স্থানীয় বাসিন্দা রবিন রায় বলেন, ‘নদে সারা বছরই হাঁটুপানি থাকে। আমরা সব সময় হেঁটেই নদ পার হই। এখন বর্ষার কারণে নদে পানি বেড়েছে। তা ছাড়া কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নদে স্রোতও বেড়েছে। ওই শিক্ষক নদে নেমে স্রোতে তালিয়ে গেছেন বলে ধারণা করছি।’

দক্ষিণ বঠিনা ইসলামপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রবীর চন্দ্র বর্মণ বলেন, ১৯৯৩ সালের ১৫ অক্টোবর বিদ্যালয়টিতে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন তৈলক্ষ্য বর্মণ। তিনি মোটরসাইকেল নিয়েই বিদ্যালয়ে আসতেন। কিন্তু কয়েক মাস ধরে তাঁর শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় তিনি মোটরসাইকেল ছেড়ে পায়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে আসা শুরু করেন। পানি কম থাকলে হেঁটে আর পানি বেশি থাকলে সাঁতরেই নদ পার হতেন তিনি।