সিপিবি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাহারুল ইসলাম মারা গেছেন

শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাহারুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রবীণ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাহারুল ইসলাম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল রোববার দিবাগত রাত একটার দিকে মানিকগঞ্জ শহরের পশ্চিম দাশড়া এলাকায় নিজ বাসভবনে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন।

আজাহারুল ইসলাম স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে, স্বজনসহ অসংখ্য রাজনৈতিক অনুসারী রেখে গেছেন। সিপিবির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, আজ সোমবার বেলা একটার দিকে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তাঁর মরদেহ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে নেওয়া হবে। জোহরের নামাজের পর সেখানে তাঁর প্রথম জানাজা হবে। গ্রামের বাড়ি জেলা সদরের বাসুদেবপুর গ্রামে আসরের নামাজের পর দ্বিতীয় জানাজা হবে। পরে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।

পারিবারিক ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, আজাহারুল ইসলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিতে দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র হিসেবে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং বুলগেরিয়া থেকে সমাজবিজ্ঞানে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর কর্মজীবনের শুরুটা শিক্ষকতা দিয়ে। মানিকগঞ্জ সদরের খাবাশপুর আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি মানিকগঞ্জ বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ছিল আজাহারুল ইসলামের। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন মানিকগঞ্জ জেলা শাখা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া সিপিবির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা অর্জনে রাশিয়া, বুলগেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে একাধিকবার সফর করেছেন। তিনি জেলা সদরে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেই সঙ্গে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

উদীচী, খেলাঘর ও প্রথম আলো মানিকগঞ্জ বন্ধুসভার উপদেষ্টা ছিলেন আজাহারুল ইসলাম। ১৯৯১ সালে মানিকগঞ্জ-৩ (মানিকগঞ্জ সদর-সাটুরিয়া) আসনে কাস্তে প্রতীকে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেন। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদেও নির্বাচন করেছিলেন।

আজাহারুলের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সিপিবির জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আবুল ইসলাম শিকদার। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে মুক্তিকামী মানুষের জন্য আজীবন লড়াই করে গেছেন আজাহারুল ইসলাম। গণমানুষের অধিকার, পরিবেশ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলাসহ সমাজের অসংগতি নিয়ে তিনি জীবনভর আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। তিনি শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে বামধারার নীতি ও আদর্শের রাজনীতির ডাক দিয়ে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।