হাশেমের মা–বাবা, স্ত্রী, ছেলের এখন কী হবে

সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া আবুল হাশেম
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে একটি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন আবুল হাশেম (৩৪)। বেতন পেতেন ১৩ হাজার টাকা। তাঁর আয়েই চলত পুরো সংসার। ঈদের ছুটি পেয়ে শুক্রবার গ্রামের বাড়িতে রওনা দেন। কিন্তু গ্রামের বাড়িতে আর পৌঁছানো হয়নি তাঁর। পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি। সংসারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশাহারা তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

মারা যাওয়া আবুল হাশেমের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মুকন্দী গ্রামে। তাঁর মা, বাবা, স্ত্রী, এক ছেলে ও ছোট ভাই রয়েছে। একমাত্র  ছেলে ফাহিম হোসেন স্থানীয় আলহেরা আইডিয়াল একাডেমির নার্সারির ছাত্র।

আজ শনিবার বেলা ১১টায় সরেজমিনে আবুল হাশেমের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, স্ত্রী ফারজানা আক্তার, মা হোসনেয়ারা বেগম, খালা বিলকিস বেগম, প্রতিবেশী ফজিলত বেগমসহ কয়েকজন নারী একসঙ্গে বিলাপ করছেন।

এ সময় বিলাপ করতে করতে ফারজানা আক্তার বলেন, ‘স্বামীকে হারিয়ে আমাকে অল্প বয়সে বিধবা হতে হলো। আমাদের আর দেখার কেউ রইল না। এখন আমাদের পরিবারে ভরণপোষণের কী হবে, একমাত্র ছেলের স্কুলের বেতন ও কোচিংয়ে মাসিক খরচ ১ হাজার ৩০০ টাকার প্রয়োজন হয়। এ টাকা কোথা থেকে দেব, আমি জানি না।’
ফারজানা আরও বলেন, শুক্রবার বেলা ১টা ৫২ মিনিটে তাঁর স্বামীর শেষ কথা হয়। পরে বেলা আড়াইটার দিকে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার খবর পান তিনি। আবুল হাশেম ঢাকা থেকে আসার পথে তাঁদের একমাত্র ছেলের জন্য অনেকগুলো খাতা, পেনসিল ও কাটার এনেছিলেন। এসব এখন কেবলই স্মৃতি হয়ে আছে। প্রতিটি খাতায় রক্তের ছাপ লেগে আছে। ৬ বছর ১০ মাস বয়সী ছেলে এখনো বুঝতে পারেনি তার বাবা বেঁচে আছেন, না মারা গেছেন।

আবুল হাশেমের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার গ্রামের বাড়িতে রওনা দেন। বাসে করে ঢাকা থেকে প্রথমে দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছান। গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সামনের আসনের ডান পাশে বসে নিজ বাড়িতে রওনা দেন। অটোরিকশাটি ঢাকা-পেন্নাই-মতলব সড়কের দাউদকান্দির নশ্বিপুর গ্রামের কাছে পৌঁছালে ঢাকাগামী একটি পিকআপ ভ্যান অটোরিকশাটিকে সামনের দিক থেকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। পিকআপের ধাক্কায় অটোরিকশার যাত্রী আবুল হাশেম মাথায় আঘাত পান।

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আবুল হাশেমের মা,স্ত্রী ও স্বজনদের আহাজারি। আজ কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মুকন্দী গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

আবুল হাশেমের পরিবারের সদস্যরা আরও বলেন, জনমানবহীন স্থানে দুর্ঘটনা ঘটায় অটোরিকশাচালক আহত আবুল হাশেমকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে সড়কের পাশে ফেলে পালিয়ে যান। পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আবুল হাশেম ঘটনাস্থলে মারা যান। স্থানীয় লোকজনের কাছে খবর পেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যার আগে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে তাঁর লাশ উদ্ধার করে। পরে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের অনুমতিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই আবুল হাশেমের লাশ তাঁদের কাছে হস্তান্তর করেন।

মুকন্দী গ্রামের বাসিন্দা সমাজসেবক শাহজালাল পাটোয়ারী বলেন, শুক্রবার রাত ১০টায় গ্রামের সড়কে জানাজা শেষে রাত সাড়ে ১০টায় আবুল হাশেমের লাশ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

উপজেলার ব্রাহ্মণদিয়া গ্রামের বাসিন্দা সৌদিপ্রবাসী মো. জিসান বলেন, আবুল হাশেমের একমাত্র ছেলে ফাহিম হোসেনের লেখাপড়ার দায়িত্ব কেউ না নিলে ছেলেটির লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে।

দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. ফারুক বলেন, আবুল হাশেমের একটি ছোট দোচালা ঘর ছাড়া আর কিছুই নেই। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আবুল হাশেম। আবুল হাশেম মারা যাওয়ায় পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে।
দাউদকান্দি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর বলেন, আবুল হাশেম সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ায় প্রাথমিকভাবে এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা নেওয়া হয়েছে। তদন্তের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।