নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে এক ব্যবসায়ীসহ তিন ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে থানায় নির্যাতনের ঘটনায় করা মামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাঁদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মামলার আসামিরা হলেন সোনারগাঁ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বর্তমানে গাজীপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোরশেদ আলম এবং সোনারগাঁ থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) বর্তমানে ভোলা জেলা গোয়েন্দা পুলিশে কর্মরত সাধন বসাক। নির্যাতনের শিকার তিন ব্যক্তি হলেন সোনারগাঁ উপজেলার যুবলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম, কাপড় ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান ও মো. বাবুল। দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন শেষে আত্মসমর্পণ করে আবারও জামিন আবেদন জানালে আদালত তা নামঞ্জুর করে আসামিদের কারাগারে পাঠান। নির্যাতনের শিকার ব্যবসায়ী আনিসুর রহমানের করা মামলায় ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তেও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গিয়েছে বলে জানান আদালত পুলিশের পরিদর্শক।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মনিরুজ্জামান বুলবুল প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে মামলার বাদীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগে ব্যবসায়ী আনিসুর মামলা করেন। ওই মামলায় আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের জামিনে ছিলেন। জামিন শেষে আসামিরা আজকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে আদালত তাঁদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত সোনারগাঁ থানার সাবেক ওসি মোরশেদ আলম ও এসআই সাধন বসাকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের ৭ অক্টোবর মধ্যরাতে যুবলীগ নেতা জাহিদুল, বাবুল ও আনিসুরকে সোনারগাঁ থানার তৎকালীন ওসি মোরশেদ আলম ও এসআই সাধন বসাককে বাসা থেকে তুলে নিয়ে থানায় নির্যাতন করেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মৃণাল কান্তি দত্ত বলেন, বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় ২০২০ সালে আদালতে একটি মামলা করা হয়। মামলার পর আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য পাঠান। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

নির্যাতনের শিকার জাহিদুল ইসলাম বলেন, সোনারগাঁ উপজেলার দত্তপাড়া এলাকায় তাঁর কেনা প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের একটি জমি দখলে নিতে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ হয়ে পুলিশ তাঁদের থানায় তুলে নিয়ে গিয়েছিল। এ সময় ওসি ও এসআই তাঁদের হাত-পা ও চোখ বেঁধে নির্যাতন করেন এবং জমিটি ছেড়ে না দিলে বন্দুকযুদ্ধে হত্যার হুমকি দেন। এ ছাড়া বন্দুকযুদ্ধ থেকে বাঁচার জন্য ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন ওসি। পুলিশের প্রস্তাবে রাজি না হলে সারা রাত থানায় আটকে রেখে নির্যাতন করে পরদিন উপজেলা যুবলীগের সভাপতির জিম্মায় ছেড়ে দেন।

মামলার বাদী আনিসুর রহমান বলেন, ‘শুধু নির্যাতন নয়, টাকা দাবি করছিলেন ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। আমাদের দুজনকে (জাহিদুল ও বাবুল) থানায় ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করার পর জাহিদের কাছ থেকে টাকা দাবি করেছিল। আমি এ ঘটনার সাক্ষী ছিলাম। আমার ওপরও অত্যাচার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করায় আমার পরিবারকে প্রতিনিয়ত ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে আসছে তারা।’