কুয়াকাটার বাজারে বিক্রির জন্য তোলা হয়েছে বিরল ‘কিং চান্দা’ মাছ

২ কেজি ৭০০ গ্রাম ওজনের মাছটির প্রতিকেজি দর হাঁকানো হচ্ছে ৯৫০টাকা
ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের পশ্চিম দিকে মাছের বাজার। সমুদ্রের মাছ ভেজে সেখানে বিক্রি করা হয়। সেখানেই এক দোকানে বিরল প্রজাতির একটি সামুদ্রিক মাছ বিক্রির জন্য নিয়ে বসে আছেন এক বিক্রেতা। আজ বুধবার সকাল থেকে ওই দোকানে মাছটি দেখা যাচ্ছে। সৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকেরা বিরল প্রজাতির মাছটি দেখতে ভিড় করছেন। মাছের বিক্রেতা বশির আহমেদের দাবি, ওই মাছের নাম ‘কিং চান্দা’। মাছটির ওজন ২ কেজি ৭০০ গ্রাম। প্রতি কেজি ৯৫০ টাকা দাম হাঁকাচ্ছেন তিনি।

সৈকত এলাকার মাছ ব্যবসায়ী ও একাধিক জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত দুই থেকে তিন বছরে তাঁরা এমন মাছ ধরা পড়তে দেখেননি। বিরল মাছটি দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। এর গায়ের রঙ হালকা খয়েরি, মুখের অংশ ছোট। সামনের দিকে দুটি বড় চোখ রয়েছে। লেজটি শরীর থেকে আলাদা করে বের হয়েছে। মাছের শরীরটাও বেশ পুরু। লেজের দিক থেকে মাছটিকে দেখলে অনেকটা কোদাল বা বেলচার মতো লাগে।

বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক ও সামুদ্রিক প্রাণিবিশেষজ্ঞ মো. কামরুল ইসলাম বলেন, লম্বা লেজযুক্ত মাছটি বেশ কয়েকটি নামে পরিচিত। এই মাছকে বাদুর মাছ বা লংফিন ব্যাট ফিসও বলে। আবার লংফিন স্পেড ফিস বা কোদাল মাছ নামেও পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Palatax Teira (প্যালাটাক্স টেইরা)।

মাছ বিক্রেতা বশির আহমেদ বলেন, কুয়াকাটা–সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে এক জেলের জালে দুই দিন আগে মাছটি ধরা পড়ে। পরে ১ হাজার ৮৫০ টাকায় তিনি মাছটি কিনেছেন। এখন ৯৫০ টাকা কেজি দরে মাছটি তিনি পর্যটকদের কাছে বিক্রি করতে চান।

সামুদ্রিক প্রাণিবিশেষজ্ঞ কামরুল ইসলাম বলেন, ছোট থেকে বড় হলে এই মাছের গায়ের রং পরিবর্তন হয়। প্রথম অবস্থায় রুপালি, পরে বাদামি এবং শেষে কালচে বাদামি রঙের হয়। পরে আবার মাছটি পুনরায় রুপালি রঙে রূপান্তরিত হতে পারে। এ প্রজাতির মাছ পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া, ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরে পাওয়া যায়। বাসস্থান হিসেবে এরা ভাসমান শৈবাল, সাগর জঞ্জাল এবং প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম প্রবালপ্রাচীর এলাকায় থাকতে পছন্দ করে। আকৃতিতে এরা সাধারণত ৬০ সে.মি. বা ২৪ ইঞ্চি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর থেকেও বড় হয়ে থাকে। ওজনের দিক থেকে ১০-১২ কেজি পর্যন্ত হয়। খাদ্য হিসেবে স্পেড ফিস ক্ষুদ্র প্রাণী, উদ্ভিদ কণা, শামুক, ঝিনুক, চিংড়ি ও সামুদ্রিক শৈবাল পছন্দ করে।

কামরুল ইসলাম বলেন, এ মাছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এ, সেলেনিয়াম, জিংক ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড আছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই মাছ খেতেও সুস্বাদু।