বুড়িগঙ্গা নদী পার হতে ঘাটে ঘাটে ঘুরছেন ঢাকাগামী লোকজন, গণপরিবহনে তল্লাশি, আটক অন্তত ১০

পুলিশ পাহারায় বুড়িগঙ্গা নদীর কেরানীগঞ্জের থানার ঘাটে। শনিবার সকাল ৭টার দিকে
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে কেরানীগঞ্জের বুড়িগঙ্গা নদীর বিভিন্ন খেয়া পারাপার আজ শনিবার সকাল থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে নদী পার হতে ঘাটে ঘাটে ঘুরছেন ঢাকাগামী লোকজন। এদিকে আজ ভোর থেকে ঢাকার প্রবেশমুখ কেরানীগঞ্জের বাংলাদেশ চীন মৈত্রী বুড়িগঙ্গা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেতু এলাকায় পুলিশের তল্লাশি ও টহল জোরদার করা হয়েছে।

পুলিশ সদস্যরা দক্ষিণাঞ্চল এবং ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ ও দূরপাল্লা থেকে ছেড়ে আসা রাজধানীগামী গণপরিবহন থামিয়ে যাত্রীদের তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। সন্দেহভাজন অন্তত ১৭ থেকে ১৮ জনকে আটক করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে পুলিশের ভাষ্য, ১০ জনকে আটক করা হয়েছে।

সকাল সাতটার দিকে সরেজমিন কেরানীগঞ্জের বরিশুড় বাজারঘাট, মান্দাইল বাজারঘাট, জিনজিরা ফেরিঘাট, আগানগর থানা ঘাট, আগানগর সেতু, নাগরমহল ঘাট ও পূর্ব আগানগর গুদারাঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ঘাটে কোনো নৌকা ভেড়ানো নেই। ঘাটের পার্শ্ববর্তী স্থানে নৌকা খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা। নৌকাগুলো মাঝিশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে। ঘাটগুলোয় পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা পাহারায় আছেন।

মিটফোর্ডের বংশীবাজার এলাকায় তৈজসপত্রের দোকানে বিক্রয়কর্মীর কাজ করেন সিদ্দিকুর রহমান। তিনি নদী পারাপারের জন্য আগানগর থানার ঘাট এলাকায় অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি সকাল সাতটা থেকে এই ঘাটে নৌকার জন্য অপেক্ষা করছি। মাঝেমধ্যে দু-একটা নৌকা ঘাটে ভিড়লেও যাত্রী নামিয়ে তৎক্ষণাৎ চলে যায়। এখান থেকে আর কোনো যাত্রী তোলে না। নৌকা চলাচলে পুলিশ বাধা দিচ্ছে। পুলিশের বাধার কারণে নৌকা ঘাটে ভিড়ছে না।’

আগানগর থানার ঘাটে দায়িত্বরত পুলিশের উপপরিদর্শক আবদুল মান্নান বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে খেয়ানৌকা চলাচলে কোনো ধরনের বাধা দেওয়া হচ্ছে না। ঘাট এলাকায় যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে, সে জন্য আমরা এখানে টহলরত অবস্থায় রয়েছি।’

আগানগর ব্রিজঘাট এলাকায় নৌকার জন্য অপেক্ষারত নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নার্স বলেন, ‘আমি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে চাকরি করি। সকাল আটটা থেকে আমার ডিউটি। সাতটা থেকে ঘাটে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু কোনো নৌকা দেখতে পারছি না। তাই মুঠোফোনে জ্যেষ্ঠ নার্সকে জানিয়েছি, নৌকা চলাচল করলে কাজে যেতে পারব। এখন বাধ্য হয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছি।’

গণপরিবহনের যাত্রীদের তল্লাশি ও জেরা করছে পুলিশ। শনিবার সকাল ৯টার দিকে কেরানীগঞ্জের কদমতলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর প্রবেশমুখে
ছবি: প্রথম আলো

সকাল আটটার দিকে পূর্ব আগানগর গুদারাঘাট এলাকায় নৌকার জন্য অপেক্ষা করছিলেন ফিরোজ শিকদার (৫২)। এ সময় তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘পুরান ঢাকার ইসলামপুরে আমার কাপড়ের দোকান। প্রতিদিন সকাল নয়টার দিকে দোকান খুলি। আমি চাবি নিয়ে গেলে কর্মচারীরা দোকান খুলবে। অথচ নৌকা চলাচল বন্ধ থাকায় নদী পারাপার হতে পারছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘নৌকা ঘাটে ভিড়বে কীভাবে? এখানে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ঘাটে নৌকা ভিড়তে দিচ্ছেন না। সাধারণ মানুষকে এভাবে হয়রানি করা উচিত না।’

আগানগর ইউনয়নের শ্রমিক লীগ নেতা ফরিদ হোসেন বলেন, নদীতে নৌকা চলাচলে তাঁরা কোনো বাধা দিচ্ছেন না। নৌকার মাঝিরা স্বেচ্ছায় রাতে নৌকা বন্ধ করে চলে গেছেন।

গণপরিবহনে যাত্রীদের তল্লাশি ও জেরা

ঢাকার নবাবগঞ্জের বান্দুরা থেকে আসা নবকলি বাসের যাত্রী পিয়াস গোমেজ বলেন, ‘আমি রাজধানীর গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে রন্ধনকর্মীর চাকরি করি। আমাদের বাসটি কেরানীগঞ্জের কদমতলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর কাছে পৌঁছালে পুলিশ বাসটি থামিয়ে যাত্রীদের তল্লাশি চালায়। এ সময় তারা আমাদের জেরা করে। অনেকের পরিচয়পত্র যাচাই–বাছাই করে দেখে। এরপর তারা বাসটিকে যাওয়ার অনুমতি দেয়।’

মাদারীপুরের ভাঙ্গা থেকে আসা স্বাধীন পরিবহনের যাত্রী ইমতিয়াজ হোসেন (৪০) বলেন, ‘আমি গুলিস্তান বঙ্গবাজারে কাপড়ের দোকানে চাকরি করি। পুলিশ আমাদের বাস থামিয়ে আমার গন্তব্য সম্পর্কে জানতে চায়, আমি তাদের বলি গুলিস্তানে যাচ্ছি। এ কথা বলার পর পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে আমাকে বাস থেকে নামিয়ে প্রিজন ভ্যানে ওঠায়। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নই।’

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) শাহবুদ্দীন কবীর বলেন, রাজধানীতে রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিকে ঘিরে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, সে জন্য নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জননিরাপত্তার স্বার্থেই তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এটি তাঁদের নিয়মিত কার্যক্রম। তিনি আরও বলেন, সন্দেহভাজন ৮ থেকে ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।