এক মাস পর রোববার স্কুলে ফিরবে তিন লাখ শিশু

বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে এসএসসি পরীক্ষার্থী জয়া দাসের বইপত্র। শনিবার সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নবীনগর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বন্ধ হয়ে যাওয়া জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে রোববার পাঠদান শুরু হবে। এতে দীর্ঘ এক মাস পর প্রায় তিন লাখ শিশুশিক্ষার্থী আবার বিদ্যালয়ে ফিরবে। মাধ্যমিক ও কলেজপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে ২০ জুলাই থেকে।

বন্যায় জেলার প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছিল। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ হাজার ৪৭৫টি। মাধ্যমিক ও কলেজপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩৫৮টি। যেসব প্রতিষ্ঠানের ভবন দোতলা বা এর বেশি উঁচু ছিল, সেগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিল বন্যার্ত মানুষ। এখনো জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ৩৫ থেকে ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ হাজারের মতো মানুষ আছে।

সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি আইনুল ইসলাম বলেন, জেলার মানুষ অতীতে কখনো এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি। এখনো মানুষ সংকটে আছে, তাতে বড়রাই বিপর্যস্ত। এর প্রভাব শিশুদের ওপর কমবেশি পড়তে পারে। তাই বিদ্যালয়ে তাদের মানসিকভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনা জোগাতে হবে।

আইনুল ইসলাম বলেন, এই বন্যার দীর্ঘ মেয়াদে একটা প্রভাব থাকবে। অনেক শিশু হয়তো বিদ্যালয়ে না-ও ফিরতে পারে। তাদেরও বিদ্যালয়ে ফেরানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

এবারের বন্যায় বেশি সমস্যায় পড়েছে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। তাদের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল ১৯ জুন থেকে। এর দুই দিন আগে ১৬ জুন শুরু হয় ভয়াবহ বন্যা। বন্যায় যেমন তাদের প্রস্তুতিতে সমস্যা হয়েছে, এর পাশাপাশি ভেসে গেছে অনেকের বই ও প্রবেশপত্র।

জেলা শহরের নবীনগর এলাকার বাসিন্দা এসএসসি পরীক্ষার্থী জয়া দাস বলে, ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করায় রাতের অন্ধকারে সব ফেলে এলাকার একটি মার্কেটের দোতলায় আশ্রয় নেয় তার পরিবার। ১০ দিন পর ঘরে ফিরে দেখে, বেশির ভাগ বইপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। সংসারে টানাপোড়েনের কারণে এখনো ওই বইগুলো কেনা হয়নি।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মনিপুরীহাটি গ্রামের কৃষক আবদুল আউয়াল বলেন, তাঁর তিন মেয়ের সব বইপত্র ঢলের পানিতে ভেসে গেছে। এর মধ্যে একজন কলেজে ও দুজন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। টাকার অভাবে এখনো তাদের বই কিনে দিতে পারেননি।

বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় ক্ষতি হয়েছে বিদ্যালয়ের ভবন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ক্রীড়াসামগ্রী ও আসবাব। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায় তিন লাখ দুই হাজার শিশু। কিন্তু বন্যার কারণে ১৬ জুনের পর আর কোনো বিদ্যালয়ে পাঠদান সম্ভব হয়নি।

আজ শনিবার দুপুরে জেলা সদরের ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শ্রমিক বিদ্যালয় ভবন, শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চসহ অন্যান্য আসবাব ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করছেন। অফিসকক্ষ থেকে বের করে ভেজা কাগজপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী রোদে শুকাতে দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যালয়টি দপ্তরি নূর আহমদ বলেন, ঈদের পরদিন বন্যার্ত মানুষ বাড়ি ফিরেছে। এর পর থেকেই তাঁরা পরিচ্ছন্নতার কাজে লেগেছেন। পুরো ভবন মানুষে ঠাসা ছিল।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আবদুর রহমান বলেন, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ হয়েছে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীও থাকবে। তবে এখনো ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র তাঁরা পাননি। বিদ্যালয় খুললে পুরো চিত্রটা পাওয়া যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও জানা যাবে।

আবদুর রহমান বলেন, ঈদের আগে বিভিন্নভাবে শিক্ষক, অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ৪০ হাজার বইয়ের চাহিদা দিয়েছেন।

এদিকে জেলায় এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ২৩ হাজার ৭৫২ জন। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, অনেকের বই, এসএসসির প্রবেশপত্র বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ঢাকা থেকে আট হাজার বই পাঠানোর কথা। এগুলো এলে বিতরণ করবেন।