চুরি করতে যাওয়া দুই যুবককে চিনে ফেলায় টাঙ্গাইলে হত্যা করা হয় সাংবাদিকের মাকে: পুলিশ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে সাংবাদিকের মা সুলতানা সুরাইয়ার বাড়িতে চুরি করতে যান দুই যুবক। সুরাইয়া চিনে ফেলেন তাঁদের। তখন ওই যুবকদের মধ্যে একজন গামছা দিয়ে তাঁর গলা পেঁচিয়ে ফেলেন। অপরজন ছুরি চালান গলায়। এতে মৃত্যু হয় সুলতানা সুরাইয়ার।

আজ বুধবার টাঙ্গাইল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মো. সিরাজ আমিন সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। সুলতানা সুরাইয়ার (৬৫) ছেলে আবু সায়েম আকন্দ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার বার্তা সম্পাদক। সুলতানা সুরাইয়া সাবেক পুলিশ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আবদুর রহিম আকন্দের স্ত্রী।

গ্রেপ্তার দুই যুবক হচ্ছেন পশ্চিম ভূঞাপুর গ্রামের সিরাজ আকন্দের ছেলে আল আমিন আকন্দ (২২) ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সায়েদাবাদের মো. শাহজাহানের ছেলে মো. লাবু (২৯)।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, সুলতানা সুরাইয়া ওই বাড়িতে একাই থাকতেন। তাঁর ছেলে ঢাকায় থাকেন। দুই মেয়ে স্বামীর বাড়িতে থাকেন। গত বৃহস্পতিবার সুরাইয়া সুলতানার মেয়ে কয়েকবার তাঁকে ফোন করেন। এ সময় মুঠোফোন বন্ধ পান তিনি। পরে সন্ধ্যায় প্রতিবেশীদের এ কথা জানান। প্রতিবেশীরা বাড়িতে গিয়ে ঘরের টিনের বেড়ায় উঁকি দিয়ে ভেতরে সুলতানা সুরাইয়াকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে পুলিশ রাত ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে যায়। পরদিন শুক্রবার ভোরের দিকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ।

এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সাংবাদিক আবু সায়েম আকন্দ বাদী হয়ে শুক্রবার বিকেলে ভূঞাপুর থানায় মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। গত রোববার মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ওই নারীকে হত্যার পর যে মুঠোফোন লুট করা হয়, তার সূত্র ধরে মো. লাবুকে সিরাজগঞ্জ থেকে গতকাল মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ভূঞাপুর থেকে আল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আল আমিন জানান, আল আমিন তাঁর প্রতিবেশী। তিনি সুলতানা সুরাইয়াকে বিভিন্ন সময় নানা কাজে সহযোগিতা করতেন। তখন বুঝতে পারেন, তাঁর (সুলতানার) কাছে টাকাপয়সা আছে। তখন তিনি তাঁর সহযোগী লাবুকে নিয়ে ওই বাড়িতে চুরির পরিকল্পনা করেন। লাবুর বাড়ি সিরাজগঞ্জে হলেও শ্বশুরবাড়ি ভূঞাপুরে। সেই সুবাদে প্রায়ই ভূঞাপুরে আসতেন তিনি।

গত বুধবার সন্ধ্যায় তাঁরা দুজন সুলতানা সুরাইয়ার ঘরে প্রবেশ করে লুকিয়ে থাকেন। রাত ১২টার দিকে সুলতানা সুরাইয়া প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বের হন। এ সময় তাঁরা মুঠোফোন ও কিছু টাকা হাতিয়ে নেন। অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র খোঁজার সময় সুলতানা সুরাইয়া ঘরে আসেন। এ সময় তিনি ওই দুজনকে চিনতে পেরে চিৎকার করেন। তখন আল আমিন গামছা দিয়ে তাঁর মুখ পেঁচিয়ে ফেলেন। লাবু ধারালো ছুরি চালান গলায়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁরা ওই বাড়ি থেকে লুটের মালামাল নিয়ে চলে যান।

পরে লাবু মুঠোফোন নেন আর আল আমিন লুণ্ঠিত টাকা নেন। লাবু মুঠোফোনের সিম যমুনা নদীতে ফেলে দেন। আর মুঠোফোন সেটটি দেড় হাজার টাকায় সিরাজগঞ্জের এক নারীর কাছে বিক্রি করেন।

আল আমিনের বাড়ি সুলতানা সুরাইয়ার বাড়ির পাশে। তিনি নগদ টাকাগুলো নিয়ে নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েন। সুলতানা সুরাইয়ার মরদেহ উদ্ধারের পর সবার সঙ্গে তিনিও লাশ দেখতে যান। পরদিন জানাজায়ও অংশ নেন তিনি।