নেতাদের দ্বন্দ্বে ভুগছে দল

আরিফুর গত শনিবার সভাপতিকে নিমন্ত্রণ না করেই উপজেলার লোহাজুড়ি ইউনিয়ন কৃষক দলের কমিটি গঠনের সভাটি সেরে ফেলেন।

কিশোরগঞ্জ জেলার মানচিত্র

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান—দুজনই প্রবীণ রাজনীতিক। একই পদে থেকে দলের নেতৃত্বে আছেন টানা ১৪ বছর। শুরুর এক যুগ সাংগঠনিক ও ব্যক্তিগত বোঝাপড়ায় তাঁদের ছিল গলায় গলায় ভাব। ইউনিয়ন কমিটি গঠন ইস্যুতে দুই বছর আগে থেকে সম্পর্কে চিড় ধরে। দেড় বছর ধরে দুই নেতার একপ্রকার মুখ দেখাদেখি বন্ধ আছে। শুধু তাই নয়, তাঁরা এখন একে অপরের বিরুদ্ধে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে চলেছেন।

কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, সভাপতির প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে এক বছর আগে আরিফুর আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত হন। আরিফুর গত শনিবার সভাপতিকে নিমন্ত্রণ না করেই উপজেলার লোহাজুড়ি ইউনিয়ন কৃষক দলের কমিটি গঠনের সভাটি সেরে ফেলেন।

সভাটিতে দলের সব শ্রেণির নেতা-কর্মীরা আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। বাদ পড়েন কেবল তোফাজ্জল। ফলে ইস্যুটি এখন উপজেলা বিএনপি রাজনীতিতে প্রধান আলোচ্য হয়ে ওঠে।

পরিকল্পিতভাবে দলকে দুর্বল করতে দলের একটি অংশ কাজ করছে।
তোফাজ্জল হোসেন, সভাপতি, কটিয়াদী বিএনপি

এ অবস্থায় দুই নেতার দ্বন্দ্বে পদে পদে দল ভুগছে বলে মন্তব্য বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর। একই সঙ্গে দ্বন্দ্বের শিকার হয়ে বিভিন্ন কমিটির নেতাদেরও ধুঁকতে হচ্ছে।

আমন্ত্রণ না জানানোর কারণ জানতে কথা হয় উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সভাপতি আলাদা করে ইফতার পার্টি করেন। আমাদের দাওয়াত নেই। ইউনিয়নে ইউনিয়নে গিয়ে ঈদ পুনর্মিলনীর অনুষ্ঠান করেন, জানি না। বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সভা হয়, তা–ও জানানো হয় না। সুতরাং আমরা তাঁকে (সভাপতি) জানানোর প্রয়োজন অনুভব করিনি।’

মুখ দেখাদেখি বন্ধের বিষয়ে তাঁর যুক্তি, ‘সাংগঠনিক কাজে সভাপতি আমাকে ডাকেন না। তাঁর প্রশ্ন, আসা–যাওয়া না থাকলে মুখ দেখাদেখি হবে কী করে।’

সভাটিতে আরিফুর প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি রহুল আমিন আখিল। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি আজিজুল হক।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, কটিয়াদীর বিএনপির রাজনীতিতে তোফাজ্জলের সক্রিয় অংশগ্রহণের বয়স ২১ বছর। আরিফুর আছেন ৩৩ বছর ধরে।

কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমানের হাত ধরে পাঁচ টাকায় দলীয় টিকিট কিনে বিএনপির রাজনীতিতে তোফাজ্জলের সক্রিয় পথচলা শুরু। সালটি ছিল ২০০১। এর আগে তিনি ইংল্যান্ডে বসবাস করতেন। এ সময় তিনি পৌর বিএনপির সভাপতি হয়েছেন চারবার। উপজেলা বিএনপির সভাপতি দুবার এবং আহ্বায়ক দুবার। মেয়র পদে চারবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দুবার জয় পান।

উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি হওয়ার মধ্য দিয়ে আরিফুর ১৯৮৮ সালে বিএনপির রাজনীতিতে নিজের নাম লেখান। তিনি উপজেলা বিএনপির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনবার। সদস্যসচিব হন দুবার।

দ্বন্দ্বের সূচনা গেল বছরের শুরুর দিকে, ইউনিয়ন কমিটি গঠন নিয়ে। নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে সাতটির কমিটি হয় দুজনের বোঝাপড়ার মধ্যেই। ভিন্নমত দেখা দেয় চান্দপুর ও করগাঁও ইউনিয়ন কমিটি নিয়ে। ওই দুই কমিটি গঠনে সম্পাদকের মত উপেক্ষিত হয়েছে অভিযোগ এনে সম্পাদক ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। তখন পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে থাকে। এরই মধ্যে সব কটি ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক একজোট হয়ে সভাপতির পক্ষ নেন। গেল বছরের ১৫ জুন তাঁরা জোটবদ্ধ হয়ে সম্পাদকের অপসারণ চেয়ে জেলা কমিটির কাছে আবেদন করেন। শেষে ২২ আগস্ট আরিফুরকে সদস্যসচিব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ২৮ নভেম্বর সম্মেলন হয়। সম্মেলনে আরিফুর প্রত্যক্ষ ভোটে ফের সম্পাদক নির্বাচিত হন।

আচমিতা, মুমুরদিয়া, চানপুর ইউনিয়নে আলাদা করে ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করেন সভাপতি। আবার ইউনিয়ন কমিটির কিছু নেতাকে পক্ষে নিয়ে আসেন সম্পাদক। জেলা বিএনপির সহসভাপতি রুহুল আমিন আখিলের বাড়ি কটিয়াদী। তিনি সম্পাদকের পক্ষ নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে সরব হয়ে উঠেছেন। এতে বিভাজন আরও স্পষ্ট হচ্ছে।

তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে দলকে দুর্বল করতে দলের একটি অংশ কাজ করছে। বিষয়টি আমি জেলা কমিটিকে জানিয়ে প্রতিকার চেয়েছি।’ মুখ দেখাদেখি বন্ধের বিষয়ে তাঁর ভাষ্য, ‘সভাপতির কাছে সম্পাদক আসবে এটা রীতি। সম্পাদক আসে না। ফলে মুখ দেখাদেখির সুযোগ নেই।’