বরেন্দ্রভূমিতে মালবেরি চাষ

জাতীয় যুব পুরস্কার পাওয়া তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা তাঁর ‘বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্ক’ মিশ্র ফলবাগানে বাণিজ্যিকভাবে মালবেরি চাষ করেছেন।

গাছভর্তি থোকায় থোকায় ঝুলছে মালবেরি। গত শুক্রবার সাপাহার উপজেলার গোডাউনপাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

গাছভর্তি থোকায় থোকায় ঝুলে রয়েছে সবুজ, লাল, সাদা, গোলাপি ও কালো রঙের ছোট ছোট ফল। আকৃতি আঙুর বা জামের মতো কিছুটা লম্বাটে। ঈষৎ টক-মিষ্টি স্বাদের ফলটির নাম মালবেরি বা তুঁত। পুষ্টিগুণসম্পন্ন ফলটি এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে উঁচু বরেন্দ্রভূমি হিসেবে পরিচিত নওগাঁর সাপাহার উপজেলার একটি মিশ্র ফল বাগানে।

জাতীয় যুব পুরস্কার পাওয়া তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা তাঁর ‘বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্ক’ মিশ্র ফলবাগানে বাণিজ্যিকভাবে মালবেরি চাষ করেছেন। পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা ১০টি গাছ থেকে গত বছর প্রথমবারের মতো মালবেরি ফল সংগ্রহ করেন তিনি। প্রথম বছরের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি তাঁর বাগানে আরও ৩০টি মালবেরি গাছ লাগান।

এ বছর তাঁর বাগানে ৪০টি গাছে ফল এসেছে। সোহেল রানা ইতিমধ্যে উত্তম কৃষি পদ্ধতি অনুসরণ করে নিরাপদ ফল উৎপাদন এবং রপ্তানি করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। এবার তাঁর বাগানে চাষ হওয়া মালবেরি স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে নতুন করে সাড়া ফেলেছে। স্থানীয় অনেক চাষি তাঁর কাছ থেকে মালবেরি  চারা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। 

গত শুক্রবার সরেজমিনে বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কে গিয়ে দেখা যায়, মিশ্র এই ফলবাগানে সবচেয়ে বেশি রয়েছে আমগাছ। এ ছাড়া বরই, মাল্টা, ড্রাগন, মালবেরিসহ দেশি-বিদেশি শতাধিক ধরনের ফলের গাছ রয়েছে। বাগানের ঢোকার মূল ফটক দিয়ে ঢোকার পরেই বাগানের পায়ে হাটা রাস্তার দুই পাশে লাগানো রয়েছে বেশ কয়েকটি মালবেরি গাছ।

গাছগুলোর প্রতিটি কাণ্ডের থোকায় থোকায় ঝুলে রয়েছে বাহারি রঙের সব মালবেরি ফল। হাটাপথ ধরে মিনিট চারেক গেলে প্রায় ছয় শতক জমিজুড়ে লাগানো মালবেরি ফলের বাগান চোখে পড়ে। গাছভর্তি থোকায় থোকায় ঝুলে রয়েছে মালবেরি। পাতার চেয়ে ফলই যেন বেশি ধরে আছে। গাছের পাতা ডিম্বাকার, খাঁজযুক্ত এবং অগ্রভাগ সুচালো। আকারে আঙুর কিংবা জামের চেয়ে কিছুটা বড় গুচ্ছ আকৃতির এই ফল। লাল, কালো, সাদা, গোলাপি ও সবুজ রঙের আটটি জাতের মালবেরি ধরে রয়েছে গাছে গাছে।

উদ্যোক্তা সোহেল রানা জানান, তিনি পরীক্ষামূলকভাবে থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া, ইতালিসহ কয়েকটি  দেশ থেকে মালবেরির জনপ্রিয় আটটি জাত সংগ্রহ করে তিন বছর আগে তাঁর বাগানে ১০টি মালবেরি গাছের চারা লাগান। এক বছরের মাথায় গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে গাছগুলোতে ফুল আসে। ওই মৌসুমে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে তিনি গাছগুলো থেকে ফল সংগ্রহ করেন। এবার ১০ থেকে ১২ দিন হলো গাছ থেকে ফল সংগ্রহ শুরু হয়েছে।

বিভিন্ন জাতের মালবেরি প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এই মৌসুমে প্রতিটি গাছ থেকে ৮ থেকে ১০ কেজি করে ফল উৎপাদন হতে পারে। খরচ বাদ দিয়ে এই মৌসুমেই প্রায় দেড় লাখ টাকার মালবেরি ফল বিক্রির আশা করছেন সোহেল রানা। 

মালবেরি চাষে ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্ভাবনা থাকায় ইতোমধ্যে সোহেল রানা তাঁর বাগানে মালবেরি চাষের পরিসর আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। সোহেল রানা বলেন, মালবেরি সম্প্রসারণ কাটিং ও গ্রাফটিং পদ্ধতিতে হয়। অনেকেই বাসার ছাদে ও জমিতে মালবেরি চাষের জন্য তাঁর বাগান থেকে মালবেরি চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ১০ কাঠা জমিতে আরও ২০০টি মালবেরি চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন।

গত শুক্রবার বিকেলে বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্কে বরেন্দ্র কৃষক প্রশিক্ষণ ও কৃষি উন্নয়ন কেন্দ্র নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় মালবেরি ফল উৎসব। এতে নওগাঁর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ফল চাষিরা উপস্থিত ছিলেন।

বাগানে মালবেরি ফল দেখতে আসা পত্নীতলা উপজেলার দিবর এলাকার আমচাষি শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘মালবেরি ফল দেখতে খুবই সুন্দর লাগল এবং খেতেও অনেক সুস্বাদু।’