ঝড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু
মৌলভীবাজারের জুড়ীতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ভোরে উপজেলার পূর্ব গোয়ালবাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ এক শিশুকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
মৃত ব্যক্তিরা হলেন ওই গ্রামের ফয়জুর রহমান (৫০), তাঁর স্ত্রী শিরি বেগম (৪৫), মেয়ে সামিয়া বেগম (১৫) ও সাবিনা আক্তার (৯) এবং ছেলে সায়েম উদ্দিন (৭)। দগ্ধ অবস্থায় আরেক মেয়ে সোনিয়া বেগমকে (১২) সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ওই ঘটনার পর সেখানে গিয়েছিলেন মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সারোআর আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের পাঁচজন মারা গেছেন। স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাঁদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।
আজ সকাল নয়টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, পূর্ব গোয়ালবাড়ি গ্রামে ফয়জুর রহমানের বাড়ির উঠানে পাঁচজনের লাশ রাখা। লাশ বহনের জন্য আনা হয়েছে পাঁচটি খাটিয়া। বাড়িতে লোকজনের ভিড়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আত্মীয়স্বজনেরাও ছুটে এসেছেন। লাশের পাশে বসে তাঁরা কান্নাকাটি করছেন। ঘরের ভেতর বিদ্যুতের তার, মিটার পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। খাটের লেপ-তোশকও পুড়ে গেছে।
পূর্ব গোয়ালবাড়ি সড়কের এক পাশে টিনের চালা ও বেড়ার তৈরি ঘরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকতেন ফয়জুর রহমান। তাঁর ঘরের ওপর দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের লাইন টানানো। নিজের জমি না থাকায় রহমত আলী নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির পতিত জমিতে ঘর তৈরি করেছিলেন ফয়জুর রহমান।
ফয়জুর রহমানের ঘরের পাশ ঘেঁষে পূর্ব ভাঙারপার জামে মসজিদ। ওই মসজিদের দারুল ক্বিরাতের শিক্ষক আনোয়ার আশরাফ সিদ্দিকী বললেন, আজ সকাল পৌনে ছয়টার দিকে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। ফজরের নামাজ পড়ার পর তিনি বিদ্যুৎ লাইনের একটি খুঁটিতে আগুন জ্বলতে দেখতে পান। তিনিসহ অন্য মুসল্লিরা পবিসের লোকজনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার চেষ্টা করেন।
আনোয়ার আশরাফ সিদ্দিকী আরও বলেন, এরপর তাঁরা ফয়জুরের বাড়িতে গিয়ে দেখেন, ভেতর থেকে টিনের দরজা লাগানো। ডাকাডাকি করেও ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ মিলছিল না। পরে দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকেন। একজনের ওপর আরেকজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। দ্রুত তাঁরা ফায়ার সার্ভিস, সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগ ও জুড়ী থানা-পুলিশকে বিষয়টি জানান। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে এলাকাবাসীর সহায়তায় লাশ বের করে আনেন। দগ্ধ সোনিয়াকে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ওই ঘটনার পর পবিসের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক এ বি এম মিজানুর রহমান, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সারোআর আলম, জুড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং প্রমুখ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ বি এম মিজানুর রহমান বলেন, সাধারণত কোনো ঘরের ওপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন টানা হয় না। লাইন স্থাপনের পর ঘরটি তৈরি করা হয়েছিল। এখন লাইনটি সরানো হবে। দগ্ধ শিশুর চিকিৎসার বিষয়ে তাঁরা সহযোগিতা করবেন।