খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করে শিশুরা

ঠিকাদার আবেদন করে দুবার কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়েছেন। গত বছরের ৩০ জুন বর্ধিত সময়সীমাও শেষ হয়েছে।

শিশুরা ক্লাস করছে খোলা আকাশের নিচে। পেছনে নির্মাণাধীন ভবন সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি। গতকাল ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সৈয়দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
প্রথম আলো

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সৈয়দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা কেউ খোলা আকাশের নিচে, কেউ বেড়ার ঘরে ক্লাস করছে। সাড়ে তিন বছর ধরে চলছে বিদ্যালয়ের পাকা ভবনের নির্মাণকাজ, আজও তা শেষ হয়নি। গত ছয় মাস কাজ বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদার। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) পক্ষ থেকে তাঁকে একাধিকবার তাগাদা দেওয়া হলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। তীব্র গরম-শীতে শিশুরা কষ্ট পোহাচ্ছে।

এলজিইডি উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এত দিন বেড়ার ঘরে ক্লাস চলছিল। এই অবস্থায় পাঁচ কক্ষের একতলা পাকা ভবনের বরাদ্দ হয়। এ জন্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৭৭ লাখ ৪৭ হাজার ২৭৯ টাকা। তবে ঠিকাদার ৬৩ লাখ ১২ হাজার ১৩৯ টাকা চুক্তিমূল্যে দরপত্র পেয়েছে। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে দরপত্র আহ্বান করা হয়। কাজটি পান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জাকাউল্লাহ অ্যান্ড ব্রাদার্স। ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ঠিকাদার কাজ শুরু করেন কার্যাদেশ পাওয়ার চার দিন পরই। তবে এরপর সাড়ে তিন বছরেও কাজটি শেষ করেননি তিনি। ইতিমধ্যে প্রায় ২০ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করেছেন ঠিকাদার। এর মধ্যে আবেদন করে দুবার কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়েছেন। গত বছরের ৩০ জুন বর্ধিত সময়সীমাও শেষ হয়েছে।

শ্রেণিকক্ষের সংকটে অনেক সময় মাঠে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকেরা। শিক্ষার্থীরা একটু রোদ হলেই টিনের গরমে বসতে পারে না। তীব্র শীতেও শিশুরা কষ্ট পায়।
মো. ওমেদুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষক, সৈয়দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

গত সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠে তৃতীয় শ্রেণির ক্লাস চলছে। ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষিকা সাহিদা খাতুন। তিনি বলেন, নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি। তাঁদের বেড়ার যে ঘর আছে, সেখানে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জায়গা হয় না। যে কারণে মাঠেই ক্লাস করাচ্ছেন।

পাশে বেড়ার ঘরে অন্য ক্লাস চলতে দেখা যায়। চার কক্ষের ওই বেড়ার ঘরের ওপরে টিনের চাল। নতুন ভবনে ছাদের ঢালাই শেষ করে ফেলে রাখা হয়েছে। এখনো ভবনের জানালা-দরজা বসানো হয়নি, হয়নি মেঝের কাজ। এরপরও রয়েছে রঙের কাজ। দু–তিন ব্যক্তিকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। তাঁরা ঠিকাদারের লোক বলে জানান। তাঁরা বলেন, দু-এক দিনের মধ্যেই কাজ আবার শুরু হবে।

এলজিইডির একটি সূত্র জানিয়েছে, কাজের দরপত্র মেসার্স জাকাউল্লাহ অ্যান্ড ব্রাদার্সের নামে দেওয়া হলেও কাজটি করছেন ঝিনাইদহের ঠিকাদার বাবুল হোসেন। তিনি একসঙ্গে মহেশপুরে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ করছেন। ওই ঠিকাদারের কাজগুলো সবই ধীরগতিতে চলে। কোনো কাজই তিনি দ্রুত শেষ করতে পারেন না। এ জন্য তাঁকে অফিসের পক্ষ থেকে একাধিকবার তাগাদা দেওয়া হলেও কোনো লাভ হয় না। তিনি অন্যের লাইসেন্সে কাজ করেন বলে অফিশিয়ালি তাঁকে ধরাও যায় না।

সৈয়দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ওমেদুল ইসলাম বলেন, ২০০৭ সালে ৩৩ শতক জমির ওপর এলাকার শিক্ষানুরাগীরা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৩ সালে সরকারিকরণ হয়। বর্তমানে শিশুশ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৮৬ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন ছয়জন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন বেড়ার ঘরে তাঁরা ক্লাস করিয়েছেন। পাকা ভবনের বরাদ্দ হওয়ায় তাঁরা খুবই খুশি হয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘসময়েও নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় এখন হতাশ হয়ে পড়েছেন। তিনি জানান, একটানা ছয় মাস কাজ বন্ধ করে ফেলে রাখা হয়েছে। ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বললে ‘হচ্ছে, হবে’ বলে কাটিয়ে দিচ্ছেন। শ্রেণিকক্ষের সংকটে অনেক সময় মাঠে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকেরা। শিক্ষার্থীরা একটু রোদ হলেই টিনের গরমে বসতে পারে না। তীব্র শীতেও শিশুরা কষ্ট পায়।

এলজিইডির মহেশপুর উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ শাহরিয়ার আকাশ বলেন, তিনি ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ শুরু করিয়েছেন। আশা করছেন এটি দ্রুত শেষ হবে। ঠিকাদার মৌখিকভাবে এক মাসের সময় নিয়েছেন। এর মধ্যে শেষ না করতে পারলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে ঠিকাদার বাবুল হোসেন বলেন, তিনি বিলম্বে প্রথম দফা বিল পেয়েছেন। তাঁর নিজের কিছু আর্থিক সমস্যা ছিল। এসব কারণে কাজটি শেষ করতে পারেননি। তবে দ্রুত কাজ শেষ করে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবেন।