খাটে পড়ে ছিল মেয়ের লাশ, আড়ায় ঝুলছিল মায়ের

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের জান্নাত বেগম ও চার বছরের মেয়ে হাজেরা আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামে আধা পাকা ঘর থেকে মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে খাটের ওপর পড়ে ছিল চার বছরের শিশু হাজেরা আক্তারের মরদেহ। আর বসতঘরের আড়ার মধ্যে ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় মা জান্নাত বেগমের (২৪) লাশ ঝুল ছিল। আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে।

জান্নাত গোপীনাথপুর গ্রামের সিঙ্গাপুরপ্রবাসী আবুল কালামের স্ত্রী। জান্নাত ও তাঁর মেয়ে হাজেরার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোপীনাথপুরের মো. শাহজাহানের ছেলে আবুল কালামের সঙ্গে একই উপজেলার বারেশ্বর গ্রামের মো. মোস্তফার মেয়ে জান্নাত বেগমের পাঁচ বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই স্বামী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে জান্নাতের কলহ শুরু হয়। গতকাল বুধবার রাতে আবুল কালামের সঙ্গে মুঠোফোনে জান্নাতের ঝগড়া হন। এরপর ভোরের কোনো এক সময়ে জান্নাত বেগম তাঁর চার বছরের মেয়ে হাজেরাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এরপর নিজে আত্মহত্যা করেন।

সকাল ১০টার দিকে মা-মেয়ে ঘুম থেকে না ওঠায় শ্বশুর মো. শাহজাহান ডাকাডাকি করেন। এতেও কোনো সাড়া মেলেনি। পরে কক্ষের দরজা ভেঙে তিনি দেখতে পান, হাজেরার লাশ খাটের ওপরে পড়ে আছে। জান্নাতের লাশ আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ঝুলছিল। এরপর তিনি চিত্কার দিলে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে আসেন। পরে বুড়িচং থানা-পুলিশকে খবর দেন গ্রামবাসী। বেলা তিনটায় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ দুটি উদ্ধার করেন। এ সময় পীরযাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের ও জান্নাত বেগমের মা সাহেনা বেগম উপস্থিত ছিলেন।

জান্নাতের মা সাহেনা বেগম বলেন, ‘আমার ছোট মেয়ের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমি গোপীনাথপুর গ্রামে আসি। এখানে এসে শুনি, আমার মেয়ে তিন দিন ধরে ভাত খায়নি। কী নিয়ে ঝগড়া তা-ও বলতে পারছি না। শ্বশুরবাড়ির কোনো লোক আমাদের খবর দেয়নি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’

জান্নাতের শ্বশুর মো. শাহজাহান বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে না ওঠায় আমি ডাক দিতে যাই। কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে দেখি, খাটে নাতনি ও আড়ায় ঝুলে আছে জান্নাত।’

পীরযাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের বলেন, ‘মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করেছে আমাদের সামনে পুলিশ।’

বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মেয়েকে হত্যার পর মা আত্মহত্যা করেছেন। তদন্ত করে সেটি বের করা হবে। কারা আত্মহত্যায় প্ররোচনা করেছেন, সেটাও দেখা হচ্ছে। লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। এখন ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হবে। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।