সখীপুরে বিএনপি নেতার মৃত্যুর দুদিন পর হত্যা মামলা করলেন বাবা

মামলা
প্রতীকী ছবি

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে রুবেলের (৫০) মৃত্যুর দুদিন পর হত্যা মামলা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে নিহত রুবেলের বাবা বাদী হয়ে সখীপুর থানায় এ মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।

গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোস্তাফিজুর রহমান মারা যান। তিনি উপজেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি সখীপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে। বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুরের মৃত্যু নিয়ে দুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা–সমালোচনা চলছে। কেউ বলছে, সড়ক দুর্ঘটনা, কেউ বলছে মদ্যপান, আবার কেউ বলছে, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কমপক্ষে ১০ বছর আগে ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে মোস্তাফিজুর রহমান সখীপুর সোনালী ব্যাংক শাখার নিচতলার মার্কেটের একটি কক্ষ ভাড়া নেন। বছরখানেক ধরে ব্যবসা না করলেও ওই কক্ষ তিনি ব্যক্তিগত কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন।

মামলার এজাহারে বাবা লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে সখীপুর উপজেলা সড়কে অবস্থিত ভোজন বিলাস হোটেল থেকে মোস্তাফিজুর বের হয়ে পূর্ব দিকে চলে যান। এরপর রাত সাড়ে ১২টার দিকে সখীপুর সোনালী ব্যাংকের নিচতলায় অবস্থিত তাঁর কার্যালয়ে আহত অবস্থায় ফিরে আসেন। বাবার ধারণা, এই আড়াই ঘণ্টা সময়ের মধ্যে মোস্তাফিজুরকে দুর্বৃত্তরা মদ পান করিয়ে বেদম মারধর করেছে। এ কারণেই তাঁর ছেলের মৃত্যু হয়েছে। এজাহারে এটাকে তিনি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্নজনের বক্তব্য

সখীপুর সোনালী ব্যাংকের নিচতলার মার্কেটের নৈশপ্রহরী শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই দিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে মোস্তাফিজুর রহমান রুবেল ভাই ব্যাংকের নিচে তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে আসেন। ওই সময় তিনি আমার সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করেন। তাঁর কপালের একপাশে ক্ষতচিহ্ন ছিল। মনে হচ্ছিল, তাঁকে কেউ মারধর করেছে।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সোনালী ব্যাংক মার্কেটের রেমন্ড টেইলার্সের মালিক বাচ্চু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আনুমানিক রাত তিনটার দিকে আমার দুজন দরজি কর্মীর সঙ্গে মোস্তাফিজুর অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তাঁরা আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন এবং তাঁদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়টি অবগত করেন। সোয়া তিনটার দিকে মোস্তাফিজুর মাতাল অবস্থায় আমার বাসায় আক্রমণ করেন। লাঠি দিয়ে দরজায় আঘাত করেন। জানালার কাচ ভেঙে ফেলেন। উপায়ন্তর না দেখে আমি পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিই। পরে পুলিশ এসে তাঁকে ধরে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে।’

সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা শামসুল জানান, শুক্রবার ভোর চারটার দিকে মোস্তাফিজুরকে হাসপাতালে আনা হয়। অতিরিক্ত মদ পান করেছেন এমন গন্ধ ও লক্ষণ দেখে তাঁর পাকস্থলী ওয়াশ (পরিষ্কার) করার কার্যক্রম শুরু হয়। একপর্যায়ে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিতে বলা হয়। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ায় হার্ট অ্যাটাকে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

মোস্তাফিজুর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সখীপুর পৌর বিএনপির সহসভাপতি পাভেল তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত আমরা জেনেছি যে রুবেল সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে শুনেছি, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কেউ বলছে, অতিরিক্ত মদ্যপানে। আমরা কার কথা বিশ্বাস করব? আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’

উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান সাজু গতকাল শনিবার রাতে এক সাক্ষাৎকারে জানান, মোস্তাফিজুর রহমান বিএনপির নিবেদিত কর্মী ছিলেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দীর্ঘদিন জেল খেটেছেন। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাঁর সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা নেই নেই। ধারণা করা হচ্ছে যে ওই সময়ের মধ্যে দুর্বৃত্তরা তাঁকে মারধর করেছে। তাঁকে জোরপূর্বক মদ খাওয়ানো হয়েছে। এটা একটা সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এর প্রকৃত রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার তদন্ত দাবি করেন শাজাহান সাজু।

টাঙ্গাইল সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুবেল মিয়া শুক্রবার সকালে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন করেন। আজ দুপুরে এসআই রুবেল প্রথম আলোকে বলেন, লাশের কপালের বাঁ পাশে একটি ক্ষতচিহ্ন ছিল। প্রতিবেদনের মন্তব্যে তিনি লিখেছেন, অতিরিক্ত মদ্যপানে উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে হার্ট অ্যাটাকে মোস্তাফিজুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে।

নিহত মোস্তাফিজুর রহমানের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন সখীপুর থানার ওসি মো. আবুল কালাম ভূঁইয়া। আজ দুপুরে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর রহস্য জানা যাবে। আপাতত অতিরিক্ত মদ্যপানেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।